সোনার তরী

দুইটি যমজ তরু পাশাপাশি,

ঘর্ষণে জ্বলে হুতাশনরাশি,

মহাদাবানল ফেলে শেষে গ্রাসি

         অরণ্য-পরিবেশ।

এক গিরি হতে দুই স্রোত-পারা

দুইটি শীর্ণ বিদ্বেষধারা

সরীসৃপগতি মিলিল তাহারা

         নিষ্ঠুর অভিমানে —

দেখিতে দেখিতে হল উপনীত

ভারতের যত ক্ষত্র-শোণিত —

ত্রাসিত ধরণী করিল ধ্বনিত

         প্রলয়বন্যা-গানে।

দেখিতে দেখিতে ডুবে গেল কূল,

আত্ম ও পর হয়ে গেল ভুল,

গৃহবন্ধন করি নির্মূল

         ছুটিল রক্তধারা ;

ফেনায়ে উঠিল মরণাম্বুধি,

বিশ্ব রহিল নিশ্বাস রুধি,

কাঁপিল গগন শত আঁখি মুদি

         নিবায়ে সূর্যতারা।

সমরবন্যা যবে অবসান

সোনার ভারত বিপুল শ্মশান,

রাজগৃহ যত ভূতলশয়ান

         পড়ে আছে ঠাঁই ঠাঁই —

ভীষণা শান্তি রক্তনয়নে

বসিয়া শোণিত-পঙ্কশয়নে,

চাহি ধরাপানে আনত বয়নে

         মুখেতে বচন নাই।

বহুদিন পরে ঘুচিয়াছে খেদ,

মরণে মিটেছে সব বিচ্ছেদ,

সমাধা যজ্ঞ মহা নরমেধ

         বিদ্বেষ-হুতাশনে।