সোনার তরী

         ফিরায়ে রহিল মুখ।

মিছে ছল করি মুখে করে রাগ,

মনে মনে তার জাগিছে সোহাগ,

গরবে ভরিয়া উঠে অনুরাগ —

          হৃদয়ে উথলে সুখ।

কবি ভাবে, ‘ বিধি অপ্রসন্ন,

বিপদ আজিকে হেরি আসন্ন। '

বসি থাকে মুখ করি বিষণ্ন

         শূন্যে নয়ন মেলি।

কবির ললনা আধখানি বেঁকে

চোরা-কটাক্ষে চাহে থেকে থেকে —

পতির মুখের ভাবখানা দেখে

         মুখের বসন ফেলি

উচ্চকণ্ঠে উঠিল হাসিয়া,

তুচ্ছ ছলনা গেল সে ভাসিয়া,

চকিতে সরিয়া নিকটে আসিয়া

         পড়িল তাহার বুকে —

সেথায় লুকায়ে হাসিয়া কাঁদিয়া,

কবির কণ্ঠ বাহুতে বাঁধিয়া,

  শত বার করি আপনি সাধিয়া

       চুম্বিল তার মুখে।

বিস্মিত কবি বিহ্বলপ্রায়

আনন্দে কথা খুঁজিয়া না পায় —

মালাখানি লয়ে আপন গলায়

       আদরে পরিলা সতী।

ভক্তি-আবেগে কবি ভাবে মনে

চেয়ে সেই প্রেমপূর্ণ বদনে —

বাঁধা প'ল এক মাল্য-বাঁধনে

       লক্ষ্মী-সরস্বতী।