সোনার তরী

‘ জানকী জানকী ' আর্ত রোদনে

ডাকিয়া ফিরিলা কাননে কাননে,

মহা-অরণ্য আঁধার-আননে

       রহিল নীরবে চাহি।

তার পরে দেখো শেষ কোথা এর,

ভেবে দেখো কথা সেই দিবসের —

এত বিষাদের   এত বিরহের

         এত সাধনের ধন,

সেই সীতাদেবী রাজসভামাঝে

বিদায়-বিনয়ে নমি রঘুরাজে

দ্বিধা ধরাতলে অভিমানে লাজে

        হইলা অদর্শন।

সে-সকল দিন সেও চলে যায় ;

সে অসহ শোক, চিহ্ন কোথায়-

যায় নি তো এঁকে ধরণীর গায়

         অসীম দগ্ধরেখা।

দ্বিধা ধরাভূমি জুড়েছে আবার,

দণ্ডকবনে ফুটে ফুলভার,

সরযূর কূলে দুলে তৃণসার

         প্রফুল্ল শ্যামলেখা।

শুধু সে দিনের একখানি সুর

চিরদিন ধ ' রে বহু বহু দূর

কাঁদিয়া হৃদয় করিছে বিধুর

         মধুর করুণ তানে ;

সে মহাপ্রাণের মাঝখানটিতে

যে মহারাগিণী আছিল ধ্বনিতে

আজিও সে গীত মহাসংগীতে

         বাজে মানবের কানে। '

তার পরে কবি কহিল সে কথা,

কুরুপাণ্ডব-সমর বারতা —

‘ গৃহবিবাদের ঘোর মত্ততা

         ব্যাপিল সর্ব দেশ ;