সোনার তরী

যে জন শুনেছে সে অনাদি ধ্বনি

ভাসায়ে দিয়েছে হৃদয়তরণী ;

জানে না আপনা, জানে না ধরণী,

       সংসার-কোলাহল।

সে জন পাগল, পরান বিকল —

ভবকূল হতে ছিঁড়িয়া শিকল

কেমনে এসেছে ছাড়িয়া সকল

       ঠেকেছে চরণে তব।

তোমার অমলকমলগন্ধ

হৃদয়ে ঢালিছে মহা-আনন্দ — '

অপূর্ব গীত, আলোক ছন্দ

         শুনিছ নিত্য নব।

বাজুক সে বীণা, মজুক ধরণী,

বারেকের তরে ভুলাও জননী,

কে বড়ো কে ছোটো, কে দীন কে ধনী,

         কেবা আগে কেবা পিছে —

কার জয় হল কার পরাজয়,

কাহার বৃদ্ধি কার হল ক্ষয়,

কেবা ভালো আর কেবা ভালো নয়,

         কে উপরে কেবা নীচে।

গাঁথা হয়ে যাক এক গীতরবে

ছোটো জগতের ছোটোবড়ো সবে,

সুখে প ' ড়ে রবে পদপল্লবে

         যেন মালা একখানি।

তুমি মানসের মাঝখানে আসি

দাঁড়াও মধুর মুরতি বিকাশি,

কুন্দবরন সুন্দরহাসি

         বীণাহাতে বীণাপাণি।

ভাসিয়া চলিবে রবিশশীতারা

সারি সারি যত মানবের ধারা

অনাদিকালের পান্থ যাহারা

         তব সংগীতস্রোতে।