সোনার তরী

সেই মোর ভালো, সেই বহু মানি —

তবু মাঝে মাঝে কেঁদে ওঠে প্রাণী,

সুরের খাদ্যে জান তো মা বাণী,

       নরের মিটে না ক্ষুধা।

যা হবার হবে, সে কথা ভাবি না,

মা গো, একবার ঝংকারো বীণা,

ধরহ রাগিণী বিশ্বপ্লাবিনা

       অমৃত-উৎস-ধারা।

যে রাগিণী শুনি নিশিদিনমান

বিপুল হর্ষে দ্রব ভগবান

মলিন মর্ত-মাঝে বহমান

নিয়ত আত্মহারা।

যে রাগিণী সদা গগন ছাপিয়া

হোমশিখাসম উঠিছে কাঁপিয়া,

অনাদি অসীমে পড়িছে ঝাঁপিয়া,

           বিশ্বতন্ত্রী হতে।

যে রাগিণী চির-জন্ম ধরিয়া

চিত্তকুহরে উঠে কুহরিয়া,

অশ্রুহাসিতে জীবন ভরিয়া,

       ছুটে সহস্র স্রোতে।

কে আছে কোথায়, কে আসে কে যায়,

নিমেষে প্রকাশে, নিমেষে মিলায় —

বালুকার ‘ পরে কালের বেলায়

       ছায়া-আলোকের খেলা!

জগতের যত রাজা-মহারাজ

কাল ছিল যারা কোথা তারা আজ,

সকালে ফুটিছে সুখদুখলাজ —

       টুটিছে সন্ধ্যাবেলা।

শুধু তার মাঝে ধ্বনিতেছে সুর

বিপুল বৃহৎ গভীর মধুর —

চিরদিন তাহে আছে ভরপুর

       মগন গগনতল।