সোনার তরী

কহে, ‘ মহারাজ, কাজ আছে মেলা,

        আদেশ পাইলে উঠি। '

রাজা শুধু মৃদু নাড়িলা হস্ত,

নৃপ-ইঙ্গিতে মহা তটস্থ

বাহির হইয়া গেল সমস্ত

       সভাস্থ দলবল —

পাত্র মিত্র অমাত্য আদি,

অর্থী প্রার্থী বাদী প্রতিবাদী,

উচ্চ তুচ্ছ বিবিধ উপাধি

       বন্যার যেন জল।

চলি গেল যবে সভ্যসুজন,

মুখোমুখি করি বসিলা দুজন,

রাজা বলে, ‘ এবে কাব্যকূজন

          আরম্ভ করো কবি। '

কবি তবে দুই কর জুড়ি বুকে

বাণীবন্দনা করে নতমুখে,

‘ প্রকাশো, জননী, নয়নসমুখে

           প্রসন্ন মুখছবি

বিমল মানসসরসবাসিনী,

শুক্লবসনা শুভ্রহাসিনী,

বীণাগঞ্জিত মঞ্জুভাষিণী

       কমলকুঞ্জাসনা,

তোমারে হৃদয়ে করিয়া আসীন

সুখে গৃহকোণে ধনমানহীন

খ্যাপার মতন আছি চিরদিন

           উদাসীন আনমনা।

চারি দিকে সবে বাঁটিয়া দুনিয়া

আপন অংশ নিতেছে গুনিয়া —

আমি তব স্নেহবচন শুনিয়া

       পেয়েছি স্বরগসুধা।