সোনার তরী

রাজা বলে, ‘ এঁরে দক্ষিণা কিছু

       দাও দক্ষিণ হাতে। '

তার পরে এল গনৎকার,

গণনায় রাজা চমৎকার,

টাকা ঝন্‌ ঝন্‌ ঝনৎকার

       বাজায়ে সে গেল চলি।

আসে এক বুড়া গণ্যমান্য

করপুটে লয়ে দূর্বাধান্য

রাজা তাঁর প্রতি অতি বদান্য

       ভরিয়া দিলেন থলি।

আসে নটভাট রাজপুরোহিত

কেহ একা কেহ শিষ্য-সহিত,

কারো বা মাথায় পাগড়ি লোহিত

        কারো বা হরিৎবর্ণ।

আসে দ্বিজগণ পরমারাধ্য —

কন্যার দায়, পিতার শ্রাদ্ধ —

  যার যথামত পায় বরাদ্দ,

       রাজা আজি দাতাকর্ণ।

যে যাহার সবে যায় স্বভবনে,

কবি কী করিবে ভাবে মনে মনে,

রাজা দেখে তারে সভাগৃহকোণে

       বিপন্নমুখছবি।

কহে ভূপ, ‘ হোথা বসিয়া কে ওই

এসো তো মন্ত্রী, সন্ধান লই। '

কবি কহি উঠে, ‘ আমি কেহ নই,

       আমি শুধু এক কবি। '

রাজা কহে, ‘ বটে! এসো এসো তবে,

আজিকে কাব্য-আলোচনা হবে। '

বসাইলা কাছে মহাগৌরবে

       ধরি তার কর দুটি।

মন্ত্রী ভাবিল, ‘ যাই এইবেলা,

এখন তো শুরু হবে ছেলেখেলা। '