সোনার তরী

হেসে ভালোবেসে দুটো কথা কয়

রাজসভাগৃহ হেন ঠাঁই নয়,

মন্ত্রী হইতে দ্বারীমহাশয়

         সবে গম্ভীর মুখ।

মানুষে কেন যে মানুষের প্রতি

ধরি আছে হেন যমের মুরতি,

তাই ভাবি কবি না পায় ফুরতি

         দমি যায় তার বুক।

বসি মহারাজ মহেন্দ্ররায়

মহোচ্চ গিরি-শিখরের প্রায়,

জন-অরণ্য হেরিছে হেলায়

         অচল-অটল-ছবি।

কৃপানির্ঝর পড়িছে ঝরিয়া

শত শত দেশ সরস করিয়া,

সে মহামহিমা নয়ন ভরিয়া

         চাহিয়া দেখিল কবি।

বিচার সমাধা হল যবে, শেষে

ইঙ্গিত পেয়ে মন্ত্রী-আদেশে

  জোড়করপুটে দাঁড়াইল এসে

         দেশের প্রধান চর।

অতি সাধুমত আকারপ্রকার,

এক তিল নাহি মুখের বিকার,

ব্যবসা যে তাঁর মানুষশিকার

         নাহি জানে কোনো নর।

ব্রত নানামত সতত পালয়ে,

এক কানাকড়ি মূল্য না লয়ে

ধর্মোপদেশ আলয়ে আলয়ে

         বিতরিছে যাকে তাকে।

চোরা কটাক্ষ চক্ষে ঠিকরে —

কী ঘটিছে কার, কে কোথা কী করে,

পাতায় পাতায় শিকড়ে শিকড়ে

         সন্ধান তার রাখে।