সোনার তরী

কোলের উপরে বসি ', বাহুপাশে

বাঁধিয়া কবিরে সোহাগে সহাসে

কপোল রাখিয়া কপোলের পাশে

         কানে কানে কথা কয়।

দেখিতে দেখিতে কবির অধরে

হাসিরাশি আর কিছুতে না ধরে,

মুগ্ধ হৃদয় গলিয়া আদরে

         ফাটিয়া বাহির হয়।

কহে উচ্ছ্বসি, ‘ কিছু না মানিব,

এমনি মধুর শ্লোক বাখানিব,

রাজভাণ্ডার টানিয়া আনিব

         ও রাঙা চরণতলে। '

বলিতে বলিতে বুক উঠে ফুলি,

উষ্ণীষ-পরা মস্তক তুলি

পথে বাহিরায় গৃহদ্বার খুলি —

         দ্রুত রাজগৃহে চলে।

কবির রমণী কুতূহলে ভাসে,

তাড়াতাড়ি উঠি বাতায়নপাশে

উঁকি মারি চায়, মনে মনে হাসে,

         কালো চোখে আলো নাচে।

কহে মনে মনে বিপুল পুলকে,

‘ রাজপথ দিয়ে চলে এত লোকে

  এমনটি আর পড়িল না চোখে

         আমার যেমন আছে। '

এদিকে কবির উৎসাহ ক্রমে

নিমেষে নিমেষে আসিতেছে কমে,

যখন পশিল নৃপ-আশ্রমে

         মরিতে পাইলে বাঁচে।

রাজসভাসদ্‌ সৈন্য পাহারা

গৃহিণীর মতো নহে তো তাহারা,

সারি সারি দাড়ি করে দিশাহারা —

         হেথা কি আসিতে আছে!