সোনার তরী

এতেক বলিয়া ত্বরিতচরণ

আনে বেশবাস নানান-ধরন ;

কবি ভাবে মুখ করি বিবরন,

      ‘ আজিকে গতিক মন্দ। '

গৃহিণী স্বয়ং নিকটে বসিয়া

তুলিল তাহারে মাজিয়া ঘষিয়া,

আপনার হাতে যতনে কষিয়া

         পরাইল কটিবন্ধ।

উষ্ণীষ আনি মাথায় চড়ায়,

কণ্ঠী আনিয়া কণ্ঠে জড়ায়,

অঙ্গদ দুটি বাহুতে পরায়,

         কুণ্ডল দেয় কানে।

অঙ্গে যতই চাপায় রতন

কবি বসি থাকে ছবির মতন,

প্রেয়সীর নিজ হাতের যতন

         সেও আজি হার মানে।

এই মতে দুই প্রহর ধরিয়া

বেশভূষা সব সমাধা করিয়া

গৃহিণী নিরখে ঈষৎ সরিয়া

         বাঁকায়ে মধুর গ্রীবা।

হেরিয়া কবির গম্ভীর মুখ

হৃদয়ে উপজে মহাকৌতুক —

হাসি উঠি কহে ধরিয়া চিবুক,

‘ আ মরি সেজেছ কিবা! '  

  ধরিল সমুখে আরশি আনিয়া,

কহিল বচন অমিয় ছানিয়া,

‘ পুরনারীদের পরান হানিয়া

         ফিরিয়া আসিবে আজি —

তখন দাসীরে ভুলো না গরবে,

এই উপকার মনে রেখো তবে,

মোরেও এমনি পরাইতে হবে

         রতনভূষণরাজি। '