চিরকুমার-সভা
পারব না। তবে আমাকে এতদিন শিক্ষা দিলে কেন। নিজের হাতে আমার সমস্ত মন প্রাণ জাগিয়ে দিয়ে শেষকালে কাজের পথ রোধ করে দাও কী বলে।

চন্দ্রবাবু। নির্মল, এক সময়ে তো বিবাহ করে তোমাকে সংসারের কাজে প্রবৃত্ত হতে হবে, চিরকুমার - সভার কাজ —

নির্মলা। বিবাহ আমি করব না।

চন্দ্রবাবু। তবে কী করবে বলো।

নির্মলা। দেশের কাজে তোমায় সাহায্য করব।

চন্দ্রবাবু। আমরা তো সন্ন্যাসব্রত গ্রহণ করতে প্রস্তুত হয়েছি।

নির্মলা। ভারতবর্ষে কি কেউ কখনো সন্ন্যাসিনী হয় নি।

চন্দ্রমাধববাবু নিরুত্তর হইয়া দাঁড়াইয়া রহিলেন

 

মামা, যদি কোনো মেয়ে তোমাদের ব্রত - গ্রহণের জন্যে অন্তরের সঙ্গে প্রস্তুত হয় তবে প্রকাশ্যভাবে তোমাদের সভার মধ্যে কেন তাকে গ্রহণ করবে না। আমি তোমাদের কৌমার্যসভার কেন সভ্য না হব।

চন্দ্রবাবু। ( দ্বিধাকুণ্ঠিতভাবে ) অন্য যাঁরা সভ্য আছেন —

নির্মলা। যাঁরা সভ্য আছেন, যাঁরা ভারতবর্ষের হিতব্রত নেবেন, যাঁরা সন্ন্যাসী হতে যাচ্ছেন, তাঁরা কি একজন ব্রতধারিণী স্ত্রীলোককে অসংকোচে নিজের দলে গ্রহণ করতে পারবেন না। তা যদি হয় তা হলে তাঁরা গৃহী হয়ে ঘরে রুদ্ধ থাকুন, তাঁদের দ্বারা কোনো কাজ হবে না।

 

চন্দ্রমাধববাবু চুলগুলোর মধ্যে ঘন ঘন পাঁচ আঙুল চালাইয়া অত্যন্ত উষ্কখুষ্ক করিয়া তুলিলেন

এমন সময় হঠাৎ তাঁহার আস্তিনের ভিতর হইতে হারানো বোতামটা মাটিতে পড়িয়া গেল

নির্মলা হাসিতে হাসিতে কুড়াইয়া লইয়া চন্দ্রমাধববাবুর কামিজের গলায় লাগাইয়া

দিল— চন্দ্রমাধববাবু তাহার কোনো খবর লইলেন না— চুলের মধ্যে

অঙ্গুলিচালনা করিতে করিতে মস্তিষ্ককুলায়ের চিন্তাগুলিকে বিব্রত

করিতে লাগিলেন। নির্মলার প্রস্থান

পূর্ণবাবুর প্রবেশ

 

পূর্ণ। চন্দ্রবাবু, সে কথাটা কি ভেবে দেখলেন। আমাদের সভাটিকে স্থানান্তর করা আমার বিবেচনায় ভালো হচ্ছে না।

চন্দ্রবাবু। আজ আর - একটি কথা উঠেছে, সেটা পূর্ণবাবু তোমার সঙ্গে ভালো করে আলোচনা করতে ইচ্ছা করি। আমার একটি ভাগ্নী আছেন বোধ হয় জান?

পূর্ণ। ( নিরীহভাবে ) আপনার ভাগ্নী?

চন্দ্রবাবু। হাঁ, তাঁর নাম নির্মলা। আমাদের চিরকুমার - সভার সঙ্গে তার হৃদয়ের খুব যোগ আছে।

পূর্ণ। ( বিস্মিতভাবে ) বলেন কী।

চন্দ্রবাবু। আমার বিশ্বাস, তাঁর অনুরাগ এবং উৎ সাহ আমাদের কারো চেয়ে কম নয়।