চিরকুমার-সভা

ও পারেতে উপবনে     কত খেলা কত জনে,

এ পারেত ধু ধু মরু বারি বিনা রে।

এইবেলা বেলা আছে, আয়, কে যাবি।

মিছে কেন কাটে কাল কত কী ভাবি।

সূর্য পাটে যাবে নেমে,       সুবাতাস যাবে থেমে,

খেয়া বন্ধ হয়ে যাবে সন্ধ্যা -আঁধারে।

শ্রীশ। গানটা বোধ হচ্ছে যেন কুমার - সভাকেই ভয় দেখাবার গান। খেয়া বন্ধ হয়ে গেলেই তো মুশকিল।

বিপিন। ঐ শুনলে না বললে — ‘এ পারেতে ধু ধু মরু বারি বিনা রে'?

পূর্ণ। তা হলে আর দেরি কেন। পারে যাবার জোগাড় করো।

শ্রীশ। গলাটা শুনে বোধ হচ্ছে পারে নিয়ে যাবে না, অতলে তলিয়ে দেবে।

[ সকলের প্রস্থান


দ্বিতীয় দৃশ্য
শ্রীশের বাসা

শ্রীশ তাহার বাসায় দক্ষিণের বারান্দায় একখানা বড়ো হাতাওয়ালা কেদারার দুই হাতার উপর

দুই পা তুলিয়া দিয়া শুক্লসন্ধ্যায় চুপচাপ বসিয়া সিগারেট ফুঁকিতেছিল। পাশে টিপায়ের

উপর রেকাবিতে একটি গ্লাসে বরফ-দেওয়া লেমনেড ও স্তূপাকার কুন্দফুলের মালা

 

বিপিনের প্রবেশ

 

বিপিন। কী গো সন্ন্যাসীঠাকুর।

শ্রীশ। ( উঠিয়া বসিয়া উচ্চৈঃস্বরে হাসিয়া ) এখনো বুঝি ঝগড়া ভুলতে পার নি? আচ্ছা ভাই শিশুপালক, তুমি কি সত্যি মনে কর আমি সন্ন্যাসী হতে পারি নে।

বিপিন। কেন পারবে না। কিন্তু অনেকগুলি তল্পিদার চেলা সঙ্গে থাকা চাই।

শ্রীশ। তার তাৎপর্য এই যে, কেউ - বা আমার বেলফুলের মালা গেঁথে দেবে, কেউ - বা বাজার থেকে লেমনেড ও বরফ ভিক্ষে করে আনবে, এই তো? তাতে ক্ষতিটা কী। যে সন্ন্যাসধর্মে বেলফুলের প্রতি বৈরাগ্য এবং ঠাণ্ডা লেমনেডের প্রতি বিতৃষ্ণা জন্মায় সেটা কি খুব উঁচু দরের সন্ন্যাস।

বিপিন। সাধারণ ভাষায় তো সন্ন্যাসধর্ম বলতে সেইরকমটাই বোঝায়।

শ্রীশ। ঐ শোনো, তুমি কি মনে কর ভাষায় একটা কথার একটা বৈ অর্থ নেই। একজনের কাছে সন্ন্যাসী কথাটার যে অর্থ আর - একজনের কাছেও যদি ঠিক সেই অর্থই হয় তা হলে মন ব'লে একটা স্বাধীন পদার্থ আছে কী করতে।

বিপিন। তোমার মন সন্ন্যাসী কথাটার কী অর্থ করছেন আমার মন সেইটি শোনবার জন্য উৎ সুক হয়েছেন।