চিরকুমার-সভা

পূর্ণ। ( উত্তেজিতভাবে ) এ কথা শুনলে আমাদের উৎ সাহ বেড়ে ওঠে। স্ত্রীলোক হয়ে তিনি —

চন্দ্রবাবু। আমিও সেই কথা ভাবছি, স্ত্রীলোকের সরল উৎ সাহ পুরুষের উৎ সাহে যেন নূতন প্রাণ সঞ্চার করতে পারে — আমি নিজেই সেটা আজ অনুভব করছি।

পূর্ণ। ( আবেগপূর্ণভাবে ) আমিও সেটা বেশ অনুমান করতে পারি।

চন্দ্রবাবু। পূর্ণবাবু, তোমারও কি ঐ মত।

পূর্ণ। কী মত বলছেন?

চন্দ্রবাবু। অর্থাৎ, যথার্থ অনুরাগী স্ত্রীলোক আমাদের কঠিন কর্তব্যের বাধা না হয়ে যথার্থ সহায় হতে পারেন।

পূর্ণ। ( নেপথ্যের প্রতি লক্ষ করিয়া উচ্চকণ্ঠে ) সে বিষয়ে আমার লেশমাত্র সন্দেহ নেই। স্ত্রীজাতির অনুরাগ পুরুষের অনুরাগের একমাত্র সজীব নির্ভর, তাঁদের উৎ সাহে আমাদের উদ্দীপনা। পুরুষের উৎ সাহকে নবজাত শিশুটির মতো মানুষ করে তুলতে পারে কেবল স্ত্রীলোকের উৎ সাহ।

শ্রীশ ও বিপিনের প্রবেশ

 

শ্রীশ। তা তো পারে পূর্ণবাবু, কিন্তু, সেই উৎ সাহের অভাবেই কি আজ সভায় যেতে বিলম্ব হচ্ছে।

চন্দ্রবাবু। না না, দেরি হবার কারণ, আমার গলার বোতামটা কিছুতেই খুঁজে পাচ্ছি নে।

শ্রীশ। গলায় তো একটা বোতাম লাগানো রয়েছে দেখতে পাচ্ছি, আরো কি প্রয়োজন আছে। যদি - বা থাকে, আর ছিদ্র পাবেন কোথা।

চন্দ্রবাবু। ( গলায় হাত দিয়া ) তাই তো! — আমরা সকলেই তো উপস্থিত আছি, এখন সেই কথাটার আলোচনা হয়ে যাওয়া ভালো, কী বল পূর্ণবাবু।

পূর্ণ। সে বেশ কথা, কিন্তু এ দিকে দেরি হয়ে যাচ্ছে না?

চন্দ্রবাবু। না, এখনো সময় আছে। শ্রীশবাবু, তোমরা একটু বোসো - না, কথাটা একটু স্থির হয়ে ভেবে দেখবার যোগ্য। আমার একটি ভাগ্নী আছেন, তাঁর নাম নির্মলা —

পূর্ণ হঠাৎ কাশিয়া লাল হইয়া উঠিল

আমাদের কুমার - সভার সমস্ত উদ্দেশ্যের সঙ্গে তাঁর একান্ত মনের মিল।

শ্রীশ এবং বিপিন অবিচলিত নিরুৎসুকভাবে শুনিয়া যাইতে লাগিল

 

এ কথা আমি নিশ্চয় বলতে পারি, তাঁর উৎসাহ আমাদের কারও চেয়ে কম নয়।

শ্রীশ ও বিপিনের কাছ হইতে কিছুমাত্র সাড়া না পাইয়া

চন্দ্রবাবুও মনে মনে একটু উত্তেজিত হইতেছিলেন

 

এ কথা আমি ভালোরূপ বিবেচনা করে দেখে স্থির করেছি, স্ত্রীলোকের উৎ সাহ পুরুষের সমস্ত বৃহৎ কার্যের মহৎ অবলম্বন। কী বল পূর্ণবাবু?

পূর্ণ। ( নিস্তেজভাবে ) তা তো বটেই।