চিরকুমার-সভা
প্রথম অঙ্ক
প্রথম দৃশ্য
অক্ষয়ের বৈঠকখানা
অক্ষয় ও পুরবালা

পুরবালা। তোমার নিজের বোন হলে দেখতুম কেমন চুপ করে বসে থাকতে। এত দিনে এক-একটির তিনটি-চারটি করে পাত্র জুটিয়ে আনতে। ওরা আমার বোন কিনা—

অক্ষয়। মানবচরিত্রের কিছুই তোমার কাছে লুকোনো নেই। নিজের বোনে এবং স্ত্রীর বোনে যে কত প্রভেদ তা এই কাঁচা বয়সেই বুঝে নিয়েছ। তা ভাই, শ্বশুরের কোনো কন্যাটিকেই পরের হাতে সমর্পণ করতে কিছুতেই মন সরে না— এ বিষয়ে আমার ঔদার্যের অভাব আছে তা স্বীকার করতে হবে।

পুরবালা। দেখো, তোমার সঙ্গে আমার একটা বন্দোবস্ত করতে হচ্ছে।

অক্ষয়। একটা চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত তো মন্ত্র পড়ে বিবাহের দিনেই হয়ে গেছে, আবার আর একটা!

পুরবালা। ওগো, এটা তত ভয়ানক নয়। এটা হয়তো তেমন অসহ্য না হতেও পারে।

অক্ষয়। সখী, তবে খুলে বলো।

গান

কী জানি কী ভেবেছ মনে

খুলে বলো ললনে।

কী কথা হায় ভেসে যায় ওই

ছলছল নয়নে।

পুরবালা। ওস্তাদজি, থামো। আমার প্রস্তাব এই যে দিনের মধ্যে একটা সময় ঠিক করো যখন তোমার ঠাট্টা বন্ধ থাকবে, যখন তোমার সঙ্গে দুটো-একটা কাজের কথা হতে পারবে।

অক্ষয়। গরিবের ছেলে, স্ত্রীকে কথা বলতে দিতে ভরসা হয় না, পাছে খপকরে বাজুবন্ধ চেয়ে বসে।

গান

পাছে       চেয়ে বসে আমার মন

আমি       তাই ভয়ে ভয়ে থাকি।

পাছে       চোখে চোখে পড়ে বাঁধা

আমি       তাই তো তুলি নে আঁখি।

পুরবালা। তবে যাও।