চিরকুমার-সভা

চন্দ্রবাবু। ঠিক কথা বলেছেন। অনেক কাঠ আছে, যেমন শীঘ্র জ্বলে ওঠে তেমনি শীঘ্র পুড়ে ছাই হয়ে যায়।

বিপিন। আছে বৈকি।

চন্দ্রবাবু। শীঘ্র জ্বলবে, অল্প অল্প করে জ্বলবে, অনেকক্ষণ ধরে শেষ পর্যন্ত জ্বলবে, এমন জিনিসটি চাই। খুঁজলে পাওয়া যাবে না কি?

শ্রীশ। খুব পাওয়া যাবে, হয়তো দেখবেন হাতের কাছেই আছে।

পূর্ণ। পাকাটি এবং খ্যাংরা কাঠি দিয়ে শীঘ্রই পরীক্ষা করে দেখব।

শ্রীশ মুখ ফিরাইয়া হাসিল

অক্ষয়ের প্রবেশ

 

অক্ষয়। মশায়, প্রবেশ করতে পারি?

ক্ষীণদৃষ্টি চন্দ্রমাধববাবু হঠাৎ চিনিতে না পারিয়া

ভ্রূ কুঞ্চিত করিয়া অবাক হইয়া চাহিয়া রহিলেন

অক্ষয়। মশায়, ভয় পাবেন না এবং এমন ভ্রূকুটি করে আমাকেও ভয় দেখাবেন না। আমি অভূতপূর্ব নই, এমন - কি, আমি আপনাদেরই ভূতপূর্ব — আমার নাম —

চন্দ্রবাবু। আর নাম বলতে হবে না। আসুন, আসুন অক্ষয়বাবু —

তিন তরুণ সভ্য অক্ষয়কে নমস্কার করিল

বিপিন ও শ্রীশ দুই বন্ধু সদ্যোবিবাদের বিমর্ষতায় গম্ভীর হইয়া বসিয়া রহিল

 

পূর্ণ। মশায়, অভূতপূর্বের চেয়ে ভূতপূর্বকেই বেশি ভয় হয়।

অক্ষয়। পূর্ণবাবু বুদ্ধিমানের মতো কথাই বলেছেন। সংসারে ভূতের ভয়টাই প্রচলিত। নিজে যে ব্যক্তি ভূত অন্য লোকের জীবনসম্ভোগটা তার কাছে বাঞ্ছনীয় হতে পারেই না, এই মনে করে মানুষ ভূতকে ভয়ংকর কল্পনা করে। অতএব সভাপতিমশায়, চিরকুমার - সভার ভূতটিকে সভা থেকে ঝাড়াবেন না পূর্বসম্পর্কের মমতা - বশত একখানি চৌকি দেবেন — এই বেলা বলুন।

চন্দ্রবাবু। চৌকি দেওয়াই স্থির।

একখানি চেয়ার অগ্রসর করিয়া দিলেন

 

অক্ষয়। সর্বসম্মতিক্রমে আসন গ্রহণ করলুম। আপনারা আমাকে নিতান্ত ভদ্রতা করে বসতে বললেন বলেই যে আমি অভদ্রতা করে বসেই থাকব আমাকে এমন অসভ্য মনে করবেন না। বিশেষত পান তামাক এবং পত্নী আপনাদের সভার নিয়মবিরুদ্ধ, অথচ ঐ তিনটে বদ অভ্যাসই আমাকে একেবারে মাটি করেছে, সুতরাং চট্‌পট্‌ কাজের কথা সেরেই বাড়িমুখো হতে হবে।

চন্দ্রবাবু। ( হাসিয়া ) আপনি যখন সভ্য নন তখন আপনার সম্বন্ধে সভার নিয়ম নাই খাটালেম ; পান - তামাকের বন্দোবস্ত বোধ হয় করে দিতে পারব, কিন্তু আপনার তৃতীয় নেশাই —

অক্ষয়। সেটি এখানে বহন করে আনবার চেষ্টা করবেন না, আমার সে নেশাটি প্রকাশ্য নয়।