চিরকুমার-সভা
দ্বিতীয় অঙ্ক
প্রথম দৃশ্য
চন্দ্রবাবুর বাড়ি। চিরকুমার-সভার ঘর
শ্রীশ ও বিপিন

শ্রীশ। তা, যাই বল, অক্ষয়বাবু যখন আমাদের সভায় ছিলেন তখন আমাদের চিরকুমার - সভা জমেছিল ভালো। আমাদের সভাপতি চন্দ্রবাবু কিছু কড়া।

বিপিন। তিনি থাকতে রস কিছু বেশি জমে উঠেছিল — চিরকৌমার্যব্রতের পক্ষে রসাধিক্যটা ভালো নয়, আমার তো এই মত।

শ্রীশ। আমার মত ঠিক উল্টো। আমাদের ব্রত কঠিন বলেই রসের দরকার বেশি। রুক্ষ মাটিতে ফসল ফলাতে গেলে কি জলসিঞ্চনের প্রয়োজন হয় না। চিরজীবন বিবাহ করব না এই প্রতিজ্ঞাই যথেষ্ট, তাই বলেই কি সব দিক থেকেই শুকিয়ে মরতে হবে।

বিপিন। যাই বল, হঠাৎ কুমার-সভা ছেড়ে দিয়ে বিবাহ করে অক্ষয়বাবু আমাদের সভাটাকে যেন আল্‌গা করে দিয়ে গেছেন। ভিতরে ভিতরে আমাদের সকলেরই প্রতিজ্ঞার জোর কমে গেছে।

শ্রীশ। কিছুমাত্র না। আমার নিজের কথা বলতে পারি, আমার প্রতিজ্ঞার বল আরো বেড়েছে। যে ব্রত সকলে অনায়াসেই রক্ষা করতে পারে তার উপরে শ্রদ্ধা থাকে না।

বিপিন। একটা সুখবর দিই শোনো।

শ্রীশ। তোমার বিবাহের সম্বন্ধ হয়েছে নাকি।

বিপিন। হয়েছে বৈকি — তোমার দৌহিত্রীর সঙ্গে ঠাট্টা রাখো, পূর্ণ কাল কুমারসভার সভ্য হয়েছে।

শ্রীশ। পূর্ণ! বল কী। তা হলে তো শিলা জলে ভাসল।

বিপিন। শিলা আপনি ভাসে না হে। তাকে আর - কিছুতে অকূলে ভাসিয়েছে।

শ্রীশ। ওহে বিপিন, পূর্ণ যে খামকা চিরকুমার - সভার সভ্য হল তার তো কোনো কারণ খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। এ সভায় কৈশিককর্ষণ, মাধ্যাকর্ষণ, চুম্বকাকর্ষণ প্রভৃতি কোনো আকর্ষণের বালাই নেই।

বিপিন। কে বললে নেই। পর্দার আড়ালে আছে।

শ্রীশ। আর-একটু খোলসা করে বলো। তোমার বুদ্ধির দৌড়টা কিরকম শুনি।

বিপিন। পূর্ণ এ সভার সভ্য হবার পর থেকে আমি লক্ষ্য করে দেখেছি যে তার দুটি চক্ষু সর্বদা ঐ দরজার দিকের পর্দাটার রহস্যভেদ করবার জন্যই নির্টিষ্ট। কারণ খুঁজতে গিয়ে দেখি পর্দার নীচের ফাঁক দিয়ে দুখানি চরণ দেখা যাচ্ছে। দেখেই বোঝা গেল, সেই চরণের দিকে যার মন বিচরণ করে কুমার-ব্রত রক্ষা করতে গিয়ে সে বিব্রত হবে।

শ্রীশ। সেই চরণযুগলের চরম তত্ত্বটা ধরতে পারলে? যাকে একটু করে জানলে মন উতলা হয় অনেক সময় তাকে সম্পূর্ণ জানলে মন শান্তি পায়। চরণ দুটি কার শুনি।