চিরকুমার-সভা

গান

জয়যাত্রায় যাও গো,     ওঠো ওঠো জয়রথে তব।

মোরা জয়মালা গেঁথে     আশা চেয়ে বসে রব।

আঁচল বিছায়ে রাখি      পথধুলা দিব ঢাকি —

ফিরে এলে হে বিজয়ী,   হৃদয়ে বরিয়া লব।

অক্ষয়। রথ প্রস্তুত, এখন কী আনব বলো।

নীরবালা। —

আঁকিয়ো হাসির রেখা     সজল আঁখির কোণে —

    নববসন্তশোভা এনো এ শূন্যবনে।

সোনার প্রদীপে জ্বালো     আঁধার ঘরের আলো,

    পরাও রাতের ভালে চাঁদের তিলক নব।

 

অক্ষয়। আর সব ভালো, কেবল তোমার ফর্দের মধ্যে সোনার প্রদীপটাই আক্‌কারা ঠেকছে। চেষ্টার ত্রুটি হবে না।

নীরবালা। দিদিদের সভাটা কোন্‌ ঘরে বসবে মুখুজ্জেমশায়।

অক্ষয়। আমার বসবার ঘরে।

নীরবালা। তা হলে সে ঘরটা একটু সাজিয়ে-গুজিয়ে দিইগে।

অক্ষয়। যতদিন আমি সে ঘরটা ব্যবহার করছি একদিনও সাজাতে ইচ্ছে হয় নি বুঝি?

নীরবালা। তোমার জন্যে ঝড়ু বেহারা আছে, তবু বুঝি আশা মিটল না?

 

পুরবালার প্রবেশ

 

পুরবালা। কী হচ্ছে তোমাদের।

নীরবালা। মুখুজ্জেমশায়ের কাছে পড়া বলে নিতে এসেছি দিদি। তা, উনি বলছেন ওঁর বাইরের ঘরটা ভালো করে ঝেড়ে সাজিয়ে না দিলে উনি পড়াবেন না। তাই সেজদিদিতে আমাতে ওঁর ঘর সাজাতে যাচ্ছি। আয় ভাই।

নৃপবালা। তোর ইচ্ছে হয়েছে তুই ঘর সাজাতে যা-না — আমি যাব না।

নীরবালা। বাঃ, আমি একা খেটে মরব, আর তুমি-সুদ্ধ তার ফল পাবে সে হবে না।

 

নৃপকে গ্রেপ্তার করিয়া লইয়া নীর চলিয়া গেল

 

পুরবালা। সব গুছিয়ে নিয়েছি। এখনো ট্রেন যাবার দেরি আছে বোধ হয়।

অক্ষয়। যদি মিস করতে চাও তা হলে ঢের দেরি আছে।