সে

এমন - কি, ডাঙার অধম পশু যে গর্দভ, যত দুর্বল সে হোক - না, বীণাপাণির আসরে সে সাক্রেদি করতে যায় নি, এ কথা তার শত্রু মিত্র এক বাক্যে স্বীকার করবে।

তা করবে।

ঘোড়া তো পোষমানা জীব — লাথি মারবার যোগ্য খুর থাকা সত্ত্বেও নির্বিবাদে চাবুক খেয়ে মরে — তার উচিত ছিল, আস্তাবলে খাড়া দাঁড়িয়ে ঝিঁঝিঁটখাম্বাজ আলাপ করা। তার চিঁহিঁ হিঁহিঁ শব্দে সে রাশি রাশি সফেন চন্দ্রবিন্দুবর্ষণ করে বটে, তবু বেসুরো অনুনাসিকে সে ডাঙার সম্মান রক্ষা করতে ভোলে না। আর গজরাজ, তাঁর কথা বলাই বাহুল্য। পশুপতির কাছে দীক্ষাপ্রাপ্ত এই - সমস্ত স্থলচর জীবের মধ্যে কি একটাও কোকিলকণ্ঠ বের করতে পার। ঐ - যে তোমার বুল্‌ডগ্‌ ফ্রেডি চীৎকারে ঘুমছাড়া করে পাড়া, ওর গলায় দয়া করে বা মজা করে বিধাতা যদি দেন শ্যামা - দোয়েলের শিস, ও তা হলে নিজের মধুর কণ্ঠের অসহ্য ধিক্কারে তোমার চল্‌‍তি মোটরের তলায় গিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়বে এ আমি বাজি রাখতে পারি। আচ্ছা, সত্যি করে বলো, কালিঘাটের পাঁঠা যদি কর্কশ ভ্যাভ্যা না করে রামকেলি ভাঁজতে থাকে, তা হলে তুমি তাকে জগন্মাতার পবিত্র মন্দির থেকে দূর - দূর করে খেদিয়ে দেবে না কি।

নিশ্চয় দেব।

তা হলে বুঝতে পারছ আমরা যে সুমহৎ ব্রত নিয়েছি তার সার্থকতা। আমরা শক্ত ডাঙার শাক্ত সন্তান, বেসুরমন্ত্রে দীক্ষিত। আধমরা দেশের চিকিৎসায় প্রয়োগ করতে চাই চরম মুষ্টিযোগ। জাগরণ চাই, বল চাই। জাগরণ শুরু হয়েছে পাড়ায় ; প্রতিবেশীদের বলিষ্ঠতা দুম্‌দাম্‌ শব্দে দুর্দাম হচ্ছে, পৃষ্ঠদেশে তার প্রমাণ পাচ্ছে আমার চেলারা। ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের কোতোয়ালরা চঞ্চল হয়ে উঠেছে, টনক নড়েছে শাসনকর্তাদের।

তোমার গুরু বলছেন কী।

তিনি মহানন্দে মগ্ন। দিব্যচক্ষে দেখতে পাচ্ছেন, বেসুরের নবযুগ এসেছে সমস্ত জগতে। সভ্য জাতরা আজ বলছে, বেসুরটাতেই বাস্তব, ওতেই পুঞ্জীভূত পৌরুষ, সুরের মেয়েমানুষই দুর্বল করেছে সভ্যতা। ওদের শাসনকর্তা বলছে, জোর চাই, খৃস্টানি চাই নে। রাষ্ট্রবিধিতে বেসুর চড়ে যাচ্ছে পর্দায় পর্দায়। সেটা কি তোমার চোখে পড়ে নি, দাদা।

চোখে পড়বার দরকার কী, ভাই। পিঠে পড়ছে দমাদ্দম।

এ দিকে বেতালপঞ্চবিংশতিই চাপল সাহিত্যের ঘাড়ে। আনন্দ করো, বাংলাও ওদের পাছু ধরেছে।

সে তো দেখছি। পাছু ধরতে বাংলা কোনোদিন পিছপাও নয়।

এ দিকে গুরুর আদেশে বেসুরমন্ত্র সাধন করবার জন্যে আমরা হৈহৈসংঘ স্থাপন করেছি। দলে একজন কবি জুটেছে। তার চেহারা দেখে আশা হয়েছিল নবযুগ মূর্তিমান। রচনা দেখে ভুল ভাঙল ; দেখি তোমারই চেলা। হাজার বার করে বলছি, ছন্দের মেরুদণ্ড ভেঙে ফেলো গদাঘাতে। বলছি, অর্থমনর্থং ভাবয়নিত্যম্‌। বুঝিয়ে দিলেম, কথার মানেটাকে সম্মান করায় কেবল দাসবুদ্ধির গাঁঠপড়া মনটাই ধরা পড়ে। ফল হচ্ছে না। বেচারার দোষ নেই — গলদ্‌ঘর্ম হয়ে ওঠে, তবু ভদ্রলোকি কাব্যের ছাঁদ ঘোচাতে পারে না। ওকে রেখেছি পরীক্ষাধীনে। প্রথম নমুনা যেটা সমিতির কাছে দাখিল করেছে সেটা শুনিয়ে দিই। সুর দিয়ে শোনাতে পারব না।

সেই জন্যেই তোমাকে ঘরে ঢুকতে দিতে সাহস হয়।

তবে অবধান করো —

 পায়ে পড়ি শোনো ভাই গাইয়ে,