প্রকল্প সম্বন্ধেপ্রকল্প রূপায়ণেরবীন্দ্র-রচনাবলীজ্ঞাতব্য বিষয়পাঠকের চোখেআমাদের লিখুনডাউনলোডঅন্যান্য রচনা-সম্ভার |
চোখ বোজবার দরকার করে না আমার। স্পষ্টই জানতে পারছি, তুমি খুব উড়ছ, পক্ষীরাজের ডানা মেঘের মধ্যে হারিয়ে গেছে।
আচ্ছা, দাদামশায়, আমার ঘোড়াটার একটা নাম দিয়ে দাও তো।
আমি বললুম, ছত্রপতি।
নামটা পছন্দ হল। রাজপুত্তুর ছাতার পিঠ চাপ্ড়িয়ে বললে, ছত্রপতি!
নিজেই ঘোড়ার হয়ে তার জবাব দিলে, আজ্ঞে!
আমার মুখের দিকে চেয়ে বললে, তুমি ভাবছ, আমি বললুম। আজ্ঞে, তা নয়, ঘোড়া বললে।
সে কথাও কি আমাকে বলতে হবে। আমি কি এত কালা।
রাজপুত্তুর বললে, ছত্রপতি, আর ভালো লাগছে না চুপচাপ পড়ে থাকতে।
তারই মুখ থেকে উত্তর পাওয়া গেল, কী হুকুম বলো।
তেপান্তরের মাঠ পেরোনো চাই।
রাজি আছি।
আমি তো আর থাকতে পারি নে, কাজ আছে ; রসে ভঙ্গ দিয়ে বলতে হল, রাজপুত্তুর, কিন্তু তোমার মাস্টার যে বসে আছে। দেখে এলুম, তার মেজাজটা চটা।
শুনে রাজপুত্রের মনটা ছট্ফট্ করে উঠল। ছাতাটাকে থাব্ড়া মেরে বললে, এখ্খনি আমাকে উড়িয়ে নিয়ে যেতে পার না কি।
বেচারা ঘোড়ার হয়ে আমাকেই বলতে হল, রাত্তির না হলে ও তো উড়তে পারে না। দিনের বেলায় ও ন্যাকামি করে ছাতা সাজে ; তুমি ঘুমোলেই ও ডানা মেলবে। এখনকার মতো পড়তে যাও, নইলে বিপদ বাধবে।
সুকুমার মাস্টারের কাছে পড়তে গেল। যাবার সময় আমাকে বললে, কিন্তু সব কথা এখনো শেষ হয় নি।
আমি বললুম, কথা কি কখনোই শেষ হতে পারে। শেষ হলে মজা কিসের।
পাঁচটায় সময় পড়া শেষ হয়ে যাবে। দাদু, তখন তুমি এসো।
আমি বললুম, থর্ড্ নম্বর রীডরের পরে মুখ বদলাবার জন্যে পয়লা নম্বরের গল্প চাই। নিশ্চয় আসব।
মাস্টারমশায়কে দেখলুম গলির মোড়ে, ট্রামের প্রত্যাশায় দাঁড়িয়ে আছেন। আমি যখন গেলুম সুকুমারদের বাড়ির ছাদে, তখন সাড়ে পাঁচটা বেজে গেছে। সামনের তেতালা বাড়িটাকে পড়তি বেলাকার রোদ্দুর আড়াল করেছে। গিয়ে দেখি, চিলেকোঠার সামনে সুকুমার চুপ করে বসে। ছাদের কোণটাতে বিশ্রাম করছে তার ছত্রপতি। পিছন দিকের সিঁড়ি দিয়ে যখন উপরে উঠে এলুম, তখনো আমার পায়ের শব্দ ওর কানে পৌঁছল না। খানিক বাদে ডাক দিলুম, রাজপুত্তুর।
ওর যেন স্বপ্ন গেল ভেঙে, চমকে উঠল।
জিগেস করলুম, বসে কী ভাবছ ভাই।
ও বললে, শুকসারীর কথা শুনছি।