সে

দাদা, তোমার নকল করি নি, এই সার্টিফিকেট আমাকে দিতে হবে।

খুশি হয়ে দেব।

নবযুগের মহাকাব্য তোমাকে লিখতে হবে দাদা।

যদি পারি। বিষয়টা কী।

বেসুর - হিড়িম্বের দিগ্বিজয়।

 

পুপুদিদিকে জিগেস করলুম, কেমন লাগল।

পুপু বললে, ধাঁ ধা লাগল।

অর্থাৎ?

অর্থাৎ, সুরাসুরের যুদ্ধে অসুরের জয়টা কেন আমার তেমন খারাপ লাগল না, তাই ভাবছি। বিশ্রী গোঁয়ারটার দিকেই রায় দিতে চাচ্ছে মন।

তার কারণ, তুমি স্ত্রীজাতীয়। অত্যাচারের মোহ কাটে নি। মার খেয়ে আনন্দ পাও, মারবার শক্তিটাকে প্রত্যক্ষ দেখে।

অত্যাচারের আক্রমণ পছন্দসই তা বলতে পারি নে — কিন্তু বীভৎসমূর্তিতে যে পৌরুষ ঘুষি উঁচিয়ে দাঁড়ায় তাকে মনে হয় সাব্লাইম।

আমার মতটা বলি। দুঃশাসনের আস্ফালনটা পৌরুষ নয়, একেবারে উল্টো। আজ পর্যন্ত পুরুষই সৃষ্টি করেছে সুন্দর, লড়াই করেছে বেসুরের সঙ্গে। অসুর সেই পরিমাণেই জোরের ভান করে যে পরিমাণে পুরুষ হয় কাপুরুষ। আজ পৃথিবীতে তারই প্রমাণ পাচ্ছি।


১৩

পুপুদিদির মনে হল, আমি ওর মর্যাদাহানি করেছি। তখন সন্ধে হয়ে আসছে। কেদারায় হেলান দিয়ে ও বসল আমার কাছে। অন্য দিকে মুখ করে বললে, তুমি আমাকে নিয়ে বানিয়ে বানিয়ে কেবল ছেলেমানুষি করছ, এতে তোমার কী সুখ।

আজকাল ওর কথা শুনে হাসতে সাহস হয় না। ভালোমানুষের মতো মুখ করেই বললুম, তোমার বয়সে পাকা বুদ্ধির প্রমাণ দিতেই তোমাদের আগ্রহ, আমার বয়সে ভাবতে ভালো লাগে যে মজ্জাটা এখনো আছে কাঁচা। সুযোগ পেলে মশ্‌গুল হয়ে ছেলেমানুষি করি বানিয়ে, হয়তো মানানসই হয় না।

তাই বলে আগাগোড়াই যদি ছেলেমানুষি কর, তা হলে সত্যিকার ছেলেমানুষিই হয় না। ছেলে বয়সের ভিতরে ভিতরে বড়ো বয়সের মিশল থাকে।

দিদি, এটা একটা কথার মতো কথা বলেছ। শিশুর কোমল দেহেও শক্ত হাড়ের গোড়াপত্তন থাকে। এ কথাটা আমি ভুলেছিলুম না কি।

তোমার বকুনি শুনে মনে হয়, যখন আমি ছোটো ছিলুম তখনকার দিনে এমন কিছুই ছিল না যা ব্যঙ্গ করবার নয় অথচ মজা করবার।

একটা উদাহরণ দেখাও।