সে

হৈহৈপাড়া ছেড়ে দূর দিয়ে যাইয়ে।

হেথা সা - রে গা - মা পা'য়ে সুরাসুরে যুদ্ধ,

শুদ্ধ কোমলগুলো বেবাক অশুদ্ধ —

অভেদ রাগিণীরাগে ভগিনী ও ভাইয়ে।

তার - ছেঁড়া তম্বুরা, তাল - কাটা বাজিয়ে —

দিনরাত বেধে যায় কাজিয়ে।

 ঝাঁপতালে দাদ্‌রায় চৌতালে ধামারে

এলোমেলো ঘা মারে —

তেরে কেটে মেরে কেটে ধাঁ ধাঁ ধাঁ ধাঁ ধাঁইয়ে।

সভাসুদ্ধ একবাক্যে বলে উঠলুম, এ চলবে না। এখনো জাতের মায়া ছাড়তে পারে নি — শুচিবায়ুগ্রস্ত, নাড়ী দুর্বল। আমরা বেছন্দ চাই বেপরোয়া। কবির মেয়াদ বাড়িয়ে দেওয়া গেল। বললুম, আরো একবার কোমর বেঁধে লাগো, বাঙালি ছেলেদের কানে জোরের কথা হাতুড়ি পিটিয়ে চালিয়ে দাও, মনে রেখো, পিটুনির চোটে ঠেলা মেরে জোর চালানো আজ পৃথিবীর সর্বত্রই প্রচলিত — বাঙালি শুধু কি ঘুমায়ে রয়। দেখলুম, লোকটার অন্তঃকরণ পাক খেয়ে উঠেছে। বলে উঠল, নয় নয়, কখনোই নয়। কলমটাকে কামড়ে ধরে ছুটে গিয়ে বসল টেবিলে। করজোড়ে গণেশকে বললে, তোমার কলাবধূকে পাঠিয়ে দাও অন্তঃপুরে সিদ্ধিদাতা। লাগাও তোমার শুঁড়ের আছাড় আমার মগজে, ভূমিকম্প লাগুক আমার মাতৃভাষায়, জোরের তপ্তপঙ্ক উৎসারিত হোক কলমের মুখে, দুঃশ্রাব্যের চোটে বাঙালির ছেলেকে দিক জাগিয়ে। কবি মিনিট পনেরো পরে বেরিয়ে চীৎকার সুরে আবৃত্তি শুরু করলে। মুখ চোখ লাল, চুলগুলো উস্কোখুস্কো, দশা পাবার দশা। —

মার্ মার্ মার্ রবে মার্ গাঁট্টা,

মারহাট্টা, ওরে মারহাট্টা।

ছুটে আয় দুদ্দাড়,

ভাঙ্‌ মাথা, ভাঙ্‌ হাড়,

কোথা তোর বাসা আছে হাড়কাট্টা।

আন্‌ ঘুষো, আন্‌ কিল,

আন্‌ ঢেলা, আন্‌ ঢিল,

নাক মুখ থেঁতো করে দিক ঠাট্টা।

আগ্‌ডুম বাগ্‌ডুম

দুম্‌দাম ধুমাধুম,

ভেঙে চুরে চুর‍্মার হোক খাট্‌টা।

ঘুম যাক, মারো কষে মাল্‌সাট্টা।

বাঁশিওলা চুপ রাও,

টান মেরে উপ্‌ড়াও

ধরা হতে ললিতলবঙ্গলতা।