প্রকাশ

হাজার হাজার বছর কেটেছে, কেহ তো কহে নি কথা—

ভ্রমর ফিরেছে মাধবীকুঞ্জে, তরুরে ঘিরেছে লতা,

চাঁদেরে চাহিয়া চকোরী উড়েছে, তড়িৎ খেলেছে মেঘে,

সাগর কোথায় খুঁজিয়া খুঁজিয়া তটিনী ছুটেছে বেগে,

ভোরের গগনে অরুণ উঠিতে কমল মেলেছে আঁখি,

নবীন আষাঢ় যেমনি এসেছে চাতক উঠেছে ডাকি!

এত যে গোপন মনের মিলন ভুবনে ভুবনে আছে,

সে কথা কেমনে হইল প্রকাশ প্রথম কাহার কাছে!

 

না জানি সে কবি জগতের কোণে কোথা ছিল দিবানিশি,

লতাপাতা চাঁদ মেঘের সহিতে এক হয়ে ছিল মিশি!

ফুলের মতন ছিল সে মৌন মনের আড়ালে ঢাকা,

চাঁদের মতন চাহিতে জানিত নয়ন স্বপনমাখা,

বায়ুর মতন পারিত ফিরিতে অলক্ষ্য মনোরথে

ভাবনা-সাধনা-বেদনা-বিহীন বিফল ভ্রমণপথে—

মেঘের মতন আপনার মাঝে ঘনায়ে আপন ছায়া

একা বসি কোণে জানিত রচিতে ঘনগম্ভীর মায়া।

 

দ্যুলোকে-ভূলোকে ভাবে নাই কেহ আছে সে কিসের খোঁজে,

হেন সংশয় ছিল না কাহারো সে যে কোনো কথা বোঝে।

বিশ্বপ্রকৃতি তার কাছে তাই ছিল নাকো সাবধানে,

ঘন ঘন তার ঘোমটা খসিত ভাবে ইঙ্গিতে গানে।

বাসরঘরের বাতায়ন যদি খুলিয়া যাইত কভু

দ্বারপাশে তারে বসিতে দেখিয়া রুধিয়া দিত না তবু।

যদি সে নিভৃত শয়নের পানে চাহিত নয়ন তুলি

শিয়রের দীপ নিবাইতে কেহ ছুঁড়িত না ফুলধূলি।

 

শশী যবে নিত নয়নে নয়নে কুমুদীর ভালোবাসা

এরে দেখি হেসে ভাবিত, এ লোক জানে না চোখের ভাষা।

নলিনী যখন খুলিত পরান চাহি তপনের পানে