কল্পনা

ভাবিত এজন ফুলগন্ধের অর্থ কিছু না জানে।

তড়িৎ যখন চকিত নিমেষে পালাত চুমিয়া মেঘে

ভাবিত, এ খ্যাপা কেমনে বুঝিবে কী আছে অগ্নিবেগে!

সহকারশাখে কাঁপিতে কাঁপিতে ভাবিত মালতীলতা,

আমি জানি আর তরু জানে শুধু কলমর্মরকথা।

 

একদা ফাগুনে সন্ধ্যাসময়ে সূর্য নিতেছে ছুটি,

পূর্বগগনে পূর্ণিমা চাঁদ করিতেছে উঠি-উঠি,

কোনো পুরনারী তরু-আলবালে জল সেচিবার ভানে

ছল করে শাখে আঁচল বাধায়ে ফিরে চায় পিছুপানে,

কোনো সাহসিকা দুলিছে দোলায় হাসির বিজুলি হানি—

না চাহে নামিতে, না চাহে থামিতে, না মানে বিনয়বাণী,

কোনো মায়াবিনী মৃগশিশুটিরে তৃণ দেয় একমনে—

পাশে কে দাঁড়ায়ে চিনেও তাহারে চাহে না চোখের কোণে।

 

হেনকালে কবি গাহিয়া উঠিল, ‘নরনারী, শুন সবে,

কত কাল ধরে কী যে রহস্য ঘটিছে নিখিল ভবে!

এ কথা কে কবে স্বপনে জানিত, আকাশের চাঁদ চাহি

পাণ্ডুকপোল কুমুদীর চোখে সারা রাত নিদ নাহি।

উদয়-অচলে অরুণ উঠিলে কমল ফুটে যে জলে

এত কাল ধরে তাহার তত্ত্ব ছাপা ছিল কোন্‌ ছলে!

এত যে মন্ত্র পড়িল ভ্রমর নবমালতীর কানে

বড়ো বড়ো যত পণ্ডিতজনা বুঝিল না তার মানে!’

 

শুনিয়া তপন অস্তে নামিল শরমে গগন ভরি,

শুনিয়া চন্দ্র থমকি রহিল বনের আড়াল ধরি!

শুনে সরোবরে তখনি পদ্ম নয়ন মুদিল ত্বরা,

দখিন-বাতাস বলে গেল তারে— সকলি পড়েছে ধরা!

শুনে ‘ছিছি’ ব’লে শাখা নাড়ি নাড়ি শিহরি উঠিল লতা,

ভাবিল মুখর এখনি না জানি আরো কী রটাবে কথা!

ভ্রমর কহিল যূথীর সভায়, যে ছিল বোবার মতো

পরের কুৎসা রটাবার বেলা তারো মুখ ফোটে কত!