সোনার তরী

যার যাহা আছে তার থাক্‌ তাই,

কারো অধিকারে যেতে নাহি চাই

শান্তিতে যদি থাকিবারে পাই

         একটি নিভৃত কোণে।

শুধু বাঁশিখানি হাতে দাও তুলি,

বাজাই বসিয়া প্রাণমন খুলি,

পুষ্পের মতো সংগীতগুলি

         ফুটাই আকাশভালে —

অন্তর হতে আহরি বচন

আনন্দলোক করি বিরচন,

গীতরসধারা করি সিঞ্চন

        সংসার-ধূলিজালে।

অতি দুর্গম সৃষ্টিশিখরে

অসীম কালের মহাকন্দরে

সতত বিশ্বনির্ঝর ঝরে।

         ঝর্ঝর সংগীতে,

স্বরতরঙ্গ যত গ্রহতারা

ছুটিছে শূন্যে উদ্দেশহারা —

সেথা হতে টানি লব গীতধারা

         ছোটো এই বাঁশরিতে।

ধরণীর শ্যাম করপুটখানি

ভরি দিব আমি সেই গীত আনি,

বাতাসে মিশায়ে দিব এক বাণী

         মধুর-অর্থ-ভরা।

নবীন আষাঢ়ে রচি নব মায়া

এঁকে দিয়ে যাব ঘনতর ছায়া,

করে দিয়ে যাব বসন্তকায়া

         বাসন্তীবাস-পরা।

ধরণীর তলে গগনের গায়

সাগরের জলে, অরণ্য-ছায়

আরেকটুখানি নবীন আভায়

         রঙিন করিয়া দিব।