পরিশিষ্ট

ইংরেজ কবি ইচ্ছা করিলেও এমনতরো নখদন্তহীন মাত্রায় ছন্দ রচিতেই পারেন না, কারণ, তাঁহাদের শব্দগুলি কোণওয়ালা।

ইচ্ছা করিলে যুক্ত-অক্ষরের আমদানি করিয়া আমরা ঐ শ্লোকটাকে শক্ত করিয়া তুলিতে পারি। যেমন–

স্পষ্ট স্মৃতি চিত্তে ভাসে

দুরন্ত অঘ্রান মাসে

অগ্নিকুণ্ড নিবে আসে

নাচে তারি উপচ্ছায়া।

এখানে বাংলার সঙ্গে ইংরেজির প্রধান প্রভেদ এই যে, বাংলা শব্দগুলিতে স্বরবর্ণের টান ইংরেজির চেয়ে বেশি। কিন্তু, আমার প্রথম পত্রেই লিখিয়াছি, সেটা কেবল সাধুভাষায়; বাংলার চলতি ভাষায় ঠিক ইহার উলটা। চলতি ভাষার কথাগুলি শুচিভাবে পরস্পরের স্পর্শ বাঁচাইয়া চলে না, ইংরেজি শব্দেরই মতো চলিবার সময় কে কাহার গায়ে পড়ে তাহার ঠিক নাই।

পূর্বপত্রেই লিখিয়াছি, বাংলা চলতি ভাষার ধ্বনিটা হসন্তের সংঘাত-ধ্বনি, এইজন্য ধ্বনিহিসাবে সংস্কৃতের চেয়ে ইংরেজির সঙ্গে তাহার মিল বেশি। তাই এই চলতি ভাষার ছন্দে মাত্রাবিভাগ বিচিত্র। বাংলা-প্রাকৃতের একটা চৌপদী নিচে লিখিলাম।–

কই পালঙ্ক, কই রে কম্বল,

কপ্‌নি-টুকরো রইল সম্বল,

এক্‌লা পাগ্‌লা ফির্‌বে জঙ্গল,

মিট্‌বে সংকট ঘুচ্‌বে ধন্দ।

ইহার সঙ্গে Ah distinctiy I remember শ্লোকটি মিলাইয়া দেখিলে দেখা যাইবে, ধ্বনির বিশেষ কোনো তফাত নাই।

ইহার সাধু পাঠ এইরূপ–

শয্যা কই বস্ত্র কই,

কী আছে কৌপীন বৈ,

একা বনে ফিরে ঐ,

নাহি মনে ভয় চিন্তা।

               
কই পা লঙ্ কই রে কম্ বল্
য্যা বস্ ত্র
               
কপ্ নি টুক্ রো রই সম্ বল্
কী ছে কৌ পী
               
এক্ লা পাগ্ লা ফির্ বে জঙ্ গল্
কা নে ফি রে