পরিশিষ্ট
ভাষার ছন্দে আর-কোনোপ্রকার ভাগ হইতে পারে বলিয়া মনে করিতে পারি না। তবে প্রভেদ হয় কিসে। মাত্রাগুলির চেহারায়।

সংস্কৃত ভাষায় অসমান স্বর ও ব্যঞ্জনগুলিকে কৌশলে মিলাইয়া সমান মাত্রায় ভাগ করিতে হয়, তাহাতে ধ্বনির বৈচিত্র্য ও গাম্ভীর্য ঘটে। যথা–

বদসি যদি। কিঞ্চিদপি। দন্তরুচি। কৌমুদী
 
হরতি দর। তিমিরমতি। ঘোরং।  

ইহা পাঁচ মাত্রা অর্থাৎ বিষম মাত্রার ছন্দ। বাঙালি জয়দেব তাঁহার গানে সংস্কৃতভাষার যুক্তবর্ণের বেণী যথাসম্ভব এলাইয়া দিতে ভালোবাসিতেন, এইজন্য উপরের উদ্‌ধৃত শ্লোকাংশটি যথেষ্ট ভালো দৃষ্টান্ত নহে; তবু ইহাতে আমার কথাটি বুঝা যাইবে। ইহার প্রত্যেক ঝোঁকে যে পাঁচমাত্রা পড়িয়াছে তাহার ভাগ এইরূপ–

১ + ১ + ১ + ১ + ১। ২ + ১ + ১ + ১। ২ + ১ + ১ + ১। ২ + ১ +২

১ + ১ + ১ + ১ + ১। ১ + ১ + ১ + ১ + ১। ২ + ২ + –

বাংলাভাষার সাধুছন্দে একের মাঝে মাঝে দুই বসিবার জায়গা পায় না, এ কথা পূর্বেই বলিয়াছি। উপরের কবিতাটুকু বাংলায় তর্জমা করিতে হইলে নিম্নলিখিত-মতো হইবে–

বচন   যদি  ।   কহ গো দুটি

দশনরুচি    ।   উঠিবে ফুটি,

ঘুচাবে মোর  ।  মনের ঘোর ।  তামসী।

একটি ইংরেজি দৃষ্টান্ত দেওয়া যাক–

Ah   distinctly   I   remember
It   was   in   the   bleak   December.

এটি চৌপদী ছন্দ। ইহার মাত্রাগুলিকে ছাড়াইয়া দেখা যাক।

Ah dis tinnct ly
I re mem ber

ইহার এক-একটা ঝোঁকে চারিটি করিয়া মাত্রা, কিন্তু অসমান শব্দগুলিকে ভাগ করিয়া এই মাত্রাগুলি তৈরি হইয়াছে এবং distinct শব্দের tinct এবং remember শব্দের memঅংশটি নিজের এক্‌সেন্টের সড়্‌কি আস্ফালন করিতেছে।

ইহাই সাধুবাংলায় হইবে–

আহা মোর মনে আসে
দারুণ শীতের মাসে।