পরিশিষ্ট
বাংলাভাষার স্বাভাবিক ছন্দ
প্রকাশক সিন্ধুদূত-এর ছন্দ সম্বন্ধে বলিতেছেন, “সিন্ধুদূতের ছন্দঃ প্রচলিত ছন্দঃসকল হইতে একরূপ স্বতন্ত্র ও নূতন। এই নূতনত্বহেতু অনেকেরই প্রথম-প্রথম পড়িতে কিছু কষ্ট হইতে পারে।... বাঙ্গালা ছন্দের প্রাণগত ভাব কি ও তাহার স্বাভাবিক গতি কোন্‌দিকে এবং কি প্রণালীতেই বা ইচ্ছামতে উহার সুন্দর বৈচিত্র্যসাধন করা যায়, ইহার নিগূঢ়তত্ত্ব সিন্ধুদূতের ছন্দঃ আলোচনা করিলে উপলব্ধ হইতে পারে।”

আমাদের সমালোচ্য গ্রন্থের ছন্দ পড়িতে প্রথম-প্রথম কষ্ট বোধ হয় সত্য; কিন্তু, ছন্দের নূতনত্ব তাহার কারণ নহে, ছত্রবিভাগের ব্যতিক্রমই তাহার একমাত্র কারণ। নিম্নে গ্রন্থ হইতে একটি শ্লোক উদ্‌ধৃত করিয়া দিতেছি।

এ কি এ, আগত সন্ধ্যা, এখনো রয়েছি বসে সাগরের তীরে?

দিবস হয়েছে গত,    না জানি ভেবেছি কত,

প্রভাত হইতে বসে রয়েছি এখানে বাহ্য জগৎ পাশরে,

ক্ষুধাতৃষ্ণা নিদ্রাহার কিছু নাহি মোর ; সব ত্যজেছে আমারে।

রীতিমতো ছত্রবিভাগ করিলে উপরি-উদ্‌ধৃত শ্লোকটি নিম্নলিখিত আকারে প্রকাশ পায়।–

এ কি এ, আগত সন্ধ্যা, এখনো রয়েছি বসে

সাগরের তীরে?

দিবস হয়েছে গত,

না জানি ভেবেছি কত,

প্রভাত হইতে বসে রয়েছি এখানে বাহ্য

জগৎ পাশরে,

ক্ষুধাতৃষ্ণা নিদ্রাহার কিছু নাই মোর ; সব

ত্যজেছে আমারে।

মাইকেল-রচিত নিম্নলিখিত কবিতাটি যাঁহাদের মনে আছে তাঁহারাই বুঝিতে পারিবেন সিন্ধুদূতের ছন্দ বাস্তবিক নূতন নহে।

আশার ছলনে ভুলি কি ফল লভিনু, হায়,

তাই ভাবি মনে?

জীবনপ্রবাহ বহি কালসিন্ধু-পানে যায়,

ফিরাব কেমনে?

একটি ছত্রের মধ্যে দুইটি ছত্র পুরিয়া দিলে পর প্রথমত চোখে দেখিতে খারাপহয়, দ্বিতীয়ত কোন্‌খানে হাঁপ ছাড়িতে হইবে পাঠকরা হঠাৎ ঠাহর পান না। এখানে-ওখানে হাতড়াইতে হাতড়াইতে অবশেষে ঠিক জায়গাটা বাহির করিতে হয়। প্রকাশক যে


১ ‘ভুবনমোহিনী প্রতিভা’র (১৮৭৫-৭৭) কবি নবীনচন্দ্র মুখোপাধ্যায়ের রচিত। ‘সিন্ধুদূত’ (১৮৮৩) এর তৃতীয় কাব্য।