গোড়ায় গলদ
ঘোমটা পরিয়া ইন্দুমতীর প্রবেশ

ইন্দুমতী। বাবা যখন বলছেন তখন দেখা করতেই হবে; কিন্তু কারো অনুরোধে তো আর পছন্দ হয় না। বাবা কখনোই আমার ইচ্ছের বিরুদ্ধে বিয়ে দেবেন না।

নিমাই। (নতশিরে ইন্দুর প্রতি) আমাদের মা-বাপ আমাদের পরস্পরের বিবাহের জন্য পীড়াপীড়ি করছেন, কিন্তু আপনি যদি ক্ষমা করেন তো আপনাকে একটি কথা বলি—

ইন্দুমতী। এ কী! এ যে ললিতবাবু। (উঠিয়া দাঁড়াইয়া) ললিতবাবু, আপনাকে বিবাহের জন্য যাঁরা পীড়াপীড়ি করছেন তাঁদের আপনি জানাবেন বিবাহ একপক্ষের সম্মতিতে হয় না। আমাকে আপনার বিবাহের কথা বলে কেন অপমান করছেন।

নিমাই। এ কী! এ যে কাদম্বিনী। (উঠিয়া দাঁড়াইয়া) আপনি এখানে আমি তা জানতুম না। আমি মনে করেছিলুম নিবারণবাবুর কন্যা ইন্দুমতীর সঙ্গে আমি কথা কচ্ছি—কিন্তু আমার যে এমন সৌভাগ্য হবে—

ইন্দুমতী। ললিতবাবু, আপনার সৌভাগ্য আপনি মনে মনে রেখে দেবেন, সে কথা আমার কাছে প্রচার করবার দরকার দেখি নে।

নিমাই। আপনি কাকে ললিতবাবু বলছেন? ললিতবাবু বারান্দায় বিনোদের সঙ্গে গল্প করছেন—যদি আবশ্যক থাকে তাঁকে ডেকে নিয়ে আসি।

ইন্দুমতী। না না, তাঁকে ডাকতে হবে না। আপনি তা হলে কে।

নিমাই। এর মধ্যেই ভুলে গেলেন? চন্দ্রবাবুর বাসায় আপনি নিজে আমাকে চাকরি দিয়েছেন, আমি তৎক্ষণাৎ তা মাথায় করে নিয়েছি—ইতিমধ্যে বরখাস্ত হবার মতো কোনো অপরাধ করিনি তো।

ইন্দুমতী। আপনার নাম কি ললিতবাবু নয়।

নিমাই। যদি পছন্দ করেন তো ঐ নামই শিরোধার্য করে নিতে পারি কিন্তু বাপ-মায়ে আমার নাম রেখেছিলেন নিমাই।

ইন্দুমতী। নিমাই!—ছি ছি, এ কথা আমি আগে জানতে পারলুম না কেন?

নিমাই। তা হলে কি চাকরি দিতেন না? তবে তো না জেনে ভালোই হয়েছে। এখন কী আদেশ করেন।

ইন্দুমতী। আমি আদেশ করছি ভবিষ্যতে যখন আপনি কবিতা লিখবেন তখন কাদম্বিনীর পরিবর্তে ইন্দুমতী নামটি ব্যবহার করবেন এবং ছন্দ মিলিয়ে লিখবেন।

নিমাই। যে দুটো আদেশ করলেন ও দুটোই যে আমার পক্ষে সমান অসাধ্য।

ইন্দুমতী। আচ্ছা ছন্দ মেলাবার ভার আমি নেব এখন, নামটা আপনি বদলে নেবেন—

নিমাই। এমন নিষ্ঠুর আদেশ কেন করছেন। চোদ্দটা অক্ষরের জায়গায় সতেরোটা বসানো কি এমনি গুরুতর অপরাধ যে সেজন্য ভৃত্যকে একেবারে—

ইন্দুমতী। না, সে অপরাধ আমি সহস্র বার মার্জনা করতে পারি কিন্তু ইন্দুমতীকে কাদম্বিনী বলে ভুল করলে আমার সহ্য হবে না—

নিমাই। আপনার নাম তবে—

ইন্দুমতী। ইন্দুমতী। তার প্রধান কারণ আপনার বাপ-মা যেমন আপনার নাম রেখেছেন নিমাই, তেমনি আমার বাপ-মা আমার নাম রেখেছেন ইন্দুমতী।