প্রকল্প সম্বন্ধেপ্রকল্প রূপায়ণেরবীন্দ্র-রচনাবলীজ্ঞাতব্য বিষয়পাঠকের চোখেআমাদের লিখুনডাউনলোডঅন্যান্য রচনা-সম্ভার |
ইন্দুমতী। তবে ঐসঙ্গে এগুলোও ফেলে দিই?
ক্ষান্তমণি। না না, ওগুলো ওঁর মকদ্দমার কাগজ—হারাতে পারলে বাঁচেন বোধ হয়, মক্কেলদের হাত থেকে উদ্ধার পান। কেন যে হারায় না তাও তো বুঝতে পারি নে। কতকগুলো গদির নীচে গোঁজা, কতক আলমারির মাথায়, কতক ময়লা চাপকানের পকেটে,যখন কোনোটার দরকার পড়ে বাড়ি মাথায় করে বেড়ান— আঁস্তাকুড় থেকে আর বাড়ির ছাত পর্যন্ত এমন জায়গা নেই যেখানে না খুঁজতে হয়।
ইন্দুমতী। এর সঙ্গে যে ইংরাজি নভেলও আছে—তারও আবার পাতা ছেঁড়া। কতকগুলো চিঠি—এ কি দরকারি।
ক্ষান্তমণি। ওর মধ্যে দরকারি আছে অদরকারিও আছে, কিচ্ছু বলবার জো নেই। খুব গোপনীয়ও আছে, সেগুলো চার দিকে ছড়ানো। খুব বেশি দরকারি চিঠি সাবধান করে রাখবার জন্যে বইয়ের মধ্যে গুঁজে রাখা হয়, সে আর কিছুতেই খুঁজে পাওয়া যায় না, ভুলেও যেতে হয়। বন্ধুরা বই পড়তে নিয়ে যায়, তার পরে কোন্ চিঠি কোন্ বইয়ের সঙ্গে কোন্ বন্ধুর বাড়ি গিয়ে পৌঁছয় তা কিছুই বলবার জো নেই। এক-একদিন বড়ো আবশ্যকের সময় গাড়িভাড়া করে বন্ধুদের বাড়ি-বাড়ি খোঁজ করে বেড়ান।
ইন্দুমতী। এক কাজ করো-না ভাই। কাউকে দিয়ে বন্ধুদের গাল দিয়ে কতকগুলো চিঠি লেখাও না-সেগুলো বইয়ের মধ্যে গোঁজা থাকবে—বন্ধুরা যখন বই ধার করে পড়বেন নিজেদের সম্বন্ধে অনেক জ্ঞানলাভ করবেন এবং সেই সুযোগে দুটি-পাঁচটি ঝরে যেতেও পারেন।
ক্ষান্তমণি। আঃ, তা হলে তো হাড় জুড়োয়।
ইন্দুমতী। এ-সব কী? কতকগুলো লেখা, কতকগুলো প্রুফ, খালি দেশলাইয়ের বাক্স, কাননকুসুমিকা, কাগজের পুঁটুলির মধ্যে ছাতাধরা মসলা, একখানা তোয়ালে,গোটাকতক দাবার ঘুঁটি, একটি ইস্কাবনের গোলাম, ছাতার বাঁট—এ চাবির গোছা ফেলে দিলে বোধ হয় চলবে না—
ক্ষান্তমণি। এই দেখো! এই চাবির মধ্যে ওঁর যথাসর্বস্ব আছে। আজ সকালে একবার খোঁজ পড়েছিল, কোথাও সন্ধান না পেয়ে শেষে উমাপতিদের বাড়ি থেকে সতেরোটা টাকা ধার করে নিয়ে এলেন। দাও তো ভাই, এ চাবি ওঁকে সহজে দেওয়া হবে না। ঐ ভাই, ওরা আসছে—চলো ও-ঘরে পালাই।
বিনোদবিহারী। (টোপর পরিয়া) সঙ তো সাজলুম, এখন তোমরা পাঁচজনে মিলে হাততালি দাও—উৎসাহ হোক, নইলে থেকে থেকে মনটা দমে যাচ্ছে।
চন্দ্রকান্ত। এখন তো কেবল নেপথ্যবিধান চলছে, আগে অভিনয় আরম্ভ হোক। তার পরে হাততালি দেবার সময় হবে।
বিনোদবিহারী। আচ্ছা চন্দর, অভিনয়টা হবে কিসের বলো তো হে! কী সাজব আমাকে বুঝিয়ে দাও দেখি।
চন্দ্রকান্ত। মহারানীর বিদূষক সাজতে হবে আর কী। যাতে তিনি একটু প্রফুল্ল থাকেন আজ রাত্রি থেকে এই তোমার একমাত্র কাজ হল।
বিনোদবিহারী। তা সাজটিও যথোপযুক্ত হয়েছে। এই টোপরটা দেখলে মনে পড়ে সেকেলে ইংরেজ রাজাদের যে “ফুল”গুলো ছিল তাদেরও টুপিটা এই আকারের।