গোড়ায় গলদ

দ্বিতীয়া। ও মিন্‌সে আবার কে ভাই!

ক্ষান্তমণি। (তাড়াতাড়ি) ও বরের ভাই হয়। —ওগো, মশায়, তোমার বিনুদার হয়ে জবাব দিতে হবে না। উনি বেশ সেয়ানা হয়েছেন—এখন দিব্যি কথা ফুটেছে। তুমি এখন নিশ্চিন্ত হয়ে ঘরে যাও।

চন্দ্রকান্ত। যে আজ্ঞে, আদেশ পেলেই নির্ভয়ে যেতে পারি। এখন বোধ করি কিছুক্ষণ ঘরে টিঁকতে পারব।

[ প্রস্থান

ইন্দুমতী। না ভাই, এখানে বড্ড আনাগোনার রাস্তা—বাইরে ওই দরজাটা দিয়ে আসি।

[ উঠিয়া দ্বারের নিকট আগমন

নিমাই। একবার উঁকি মেরে বিনুদার অবস্থাটা দেখে যেতে হচ্ছে।

[ ইন্দুমতীর সম্মুখে আসিয়া উপস্থিত

ইন্দুমতী। আপনারা বেশি ব্যস্ত হবেন না, আপনাদের প্রাণের বন্ধুটি জলে পড়েন নি।

নিমাই। সে জন্যে আমি কিছু ব্যস্ত হই নি। আমার নিজের একটা জিনিস হারিয়েছে আমি তারই খোঁজ করে বেড়াচ্ছি।

ইন্দুমতী। হারাবার মতো জিনিস যেখানে-সেখানে ফেলে রাখেন কেন।

নিমাই। সে আমাদের জাতের স্বধর্ম— আমরা সাবধান হতে শিখি নি। সে খাতাটা যদি আপনার হাতে পড়ে থাকে—

ইন্দুমতী। খাতা? হিসেবের খাতা?

নিমাই। তাতে কেবল খরচের হিসেবটাই ছিল, জমার হিসেবটা যদি বসিয়ে দেন তো আপনার কাছেই থাক্‌।

ইন্দুমতী। ছি ছি, আজ আমি কী যে বকাবকি করছি তার ঠিক নেই। আজ আমার কী হয়েছে!

[ দ্রুত দ্বার রোধ
তৃতীয় অঙ্ক
প্রথম দৃশ্য
বাগবাজারের রাস্তা

নিমাই

নিমাই। আহা, এই বাড়িটা আমার শরীর থেকে আমার মনটুকুকে যেন শুষে নিচ্ছে—ব্লটিং যেমন কাগজ থেকে কালি শুষে নেয়। কিন্তু কোন্‌ দিকে সে থাকে এ পর্যন্ত কিছুই সন্ধান করতে পারলুম না। ঐ যে পশ্চিমের জানলার ভিতর দিয়ে একটা সাদা কাপড়ের মতো যেন দেখা গেল—না না, ও তো নয়, ও তো একজন দাসী দেখছি—ও কী করছে। একটা ভিজে শাড়ি শুকোতে দিচ্ছে। বোধ হয় তাঁরই শাড়ি। আহা, নাগাল পেলে একবার স্পর্শ করে নিতুম। তা হলে এতক্ষণে তাঁর স্নান হল। পিঠের উপর ভিজে চুল ফেলে সাফ কাপড়টি পরে এখন কি করছেন। একবার কিছুতেই কি দেখা হতে পারে না। আমরা কি বনের জন্তু। আমাদের কেন এত ভয়। এত করে এতগুলো দেয়াল গেঁথে এতগুলো দরজা-জানলা বন্ধ করে মানুষের কাছ থেকে মানুষ লুকিয়ে থাকে কেন।

পালকিতে শিবচরণের প্রবেশ

শিবচরণ। (বেহারার প্রতি) আরে রাখ্‌ রাখ্‌। (পালকি হইতে অবতরণ) বেটার তবু হুঁশ নেই! দেখো-না, হাঁ করে দাঁড়িয়ে