গোড়ায় গলদ

চন্দ্রকান্ত। এই-যে নিমাই, একা একা বসে রয়েছ! তোমার হল কী বলো দেখি। আজকাল তোমার যে দেখা পাবারই জো নেই।

নিমাই। আর ভাই, একজামিনের যে তাড়া পড়েছে—

চন্দ্রকান্ত। সেদিন সন্ধেবেলায় ট্রামে করে আসতে আসতে দেখি, তুমি বাগবাজারের রাস্তায় দাঁড়িয়ে হাঁ করে তারা দেখছ। আজকাল কি তুমি ডাক্তারি ছেড়ে অ্যাস্ট্রনমি ধরেছ। যা হোক আজ বিনোদের বিয়ে মনে আছে তো?

নিমাই। তাই তো,ভুলে গিয়েছিলুম বটে।

চন্দ্রকান্ত। তোমার স্মরণশক্তির যেরকম অবস্থা দেখছি একজামিনের পক্ষে সুবিধে নয়। তা চলো।

নিমাই। আজ শরীরটা তেমন ভালো ঠেকছে না, আজ থাক্‌—

চন্দ্রকান্ত। বিনোদের বিয়েটা তো বছরের মধ্যে সদাসর্বদা হবে না নিমাই। যা হবার আজই চুকে যাবে। অতএব আজ তোমাকে ছাড়ছি নে, চলো।

নিমাই। চলো।

[ প্রস্থান

দ্বিতীয় দৃশ্য
চন্দ্রকান্তের অন্তঃপুর
ক্ষান্তমণি ও ইন্দুমতী

ক্ষান্তমণি। তোমাদের বাড়ির আয়োজন সব হল?

ইন্দুমতী। হাঁ ভাই, একরকম হল। এখন তোমাদের বাড়ি কী হচ্ছে তাই দেখতে এসেছি। আমি বরের ঘরেও আছি, কনের ঘরেও আছি। বর তো তোমাদের এখান থেকে বেরোবেন? তাঁর তিন কুলে আর কেউ নেই না কি।

ক্ষান্তমণি। ঐ তো ভাই, ওদের কথা বুঝবে কে। বাপ-মা নেই বটে, কিন্তু শুনেছি দেশে পিসি-মাসি সব আছে—কিন্তু তাদের খবরও দেয় নি। বলে যে, বিয়ে করছি, হাট বসাচ্ছি নে তো! ওঁকে বললুম, তুমি তাদের খবর দাও—উনি বলেন তাতে খরচপত্র বিস্তর বেড়ে যাবে—বিয়ে করতেই যদি বেবাক খরচ হয়ে যায় তো ঘরকন্না করতে বাকি থাকবে কী—শুনেছ একবার কথা! আবার বলে কী—এ তো আর শুম্ভনিশুম্ভর যুদ্ধু হচ্ছে না, কেবল দুটিমাত্র প্রাণীর বিয়ে, এর জন্যে এত শোরসরাবৎ লোকলস্করের দরকার কী?

ইন্দুমতী। কিছু ধুমধাম নেই, আমার ভাই এ মন উঠছে না। আমাদের হাতে একবার পড়লে তাকে আচ্ছা করে শিক্ষা দিতে হবে—দুটিমাত্র প্রাণীর বিয়ে যে কতবড়ো ব্যাপার তা তাকে একরকম মোটামুটি বুঝিয়ে দেব।—আজ যে তুমি বাইরের ঘরে?

ক্ষান্তমণি। এই ঘরে সব বরযাত্রী জুটবে। দেখ্‌-না ভাই ঘরের অবস্থাখানা। তারা আসবার আগে একটুখানি গুছিয়ে নেবার চেষ্টায় আছি।

ইন্দুমতী। তোমার একলার কর্ম নয়, এস ভাই দুজনে এ জঞ্জাল সাফ করা যাক। এগুলো দরকারি নাকি?

ক্ষান্তমণি। কিচ্ছু না। যত রাজ্যির পুরোনো খবরের কাগজ জমেছে। কাগজগুলো যেখানে পড়া হয়ে যায় সেইখানেই পড়ে