প্রায়শ্চিত্ত

প্রতাপাদিত্য। দেখো পিতৃব্যঠাকুর, যশোরের রায়-বংশের কিসে মান-অপমান সে জ্ঞান যদি তোমার থাকবে, তবে কি ওই পাকা মাথার উপর মোগল-বাদশার শিরোপা জড়িয়ে বেড়াতে পার। তোমার ওই মাথাটা ধূলিতে লুটাবার সাধ ছিল, বিধাতার বিড়ম্বনায় তাতে বাধা পড়ল। এই তোমাকে স্পষ্টই বললুম। খুড়ামহাশয় এখন আমার নিদ্রার সময়।

বসন্ত রায়ের দিকে পিছন করিয়া চোখ বুজিয়া শয়ন

বসন্ত রায়। প্রতাপ আমি সব বুঝেছি -তুমি যখন একবার ছুরি তোল তখন সে ছুরি একজনের উপর পড়তেই চায়, আমি তার লক্ষ্য হতে সরে পড়লুম বলে আর-এক জন তার লক্ষ্য হয়েছে। ভালো প্রতাপ, তোমার ক্ষুধিত ক্রোধ একজনকে যদি গ্রাস করতেই চায়, তবে আমাকেই করুক। প্রতাপ। ( প্রতাপ নিদ্রার ভানে নিরুওর) প্রতাপ! (প্রতাপ নিরুওর) বাবা প্রতাপ, একবার বিভার কথা ভেবে দেখো। (প্রতাপ নিরুওর) করুনাময় হরি!

[বসন্তরায়ের প্রস্থান


নটনটীগণ

প্রথমা। কই, এখনও তো ফিরলেন না!

দ্বিতীয়া। আর তো ভাই পারি নে। ঘুম পেয়ে আসছে।

তৃতীয়া। ফের কি সভা জমবে নাকি?

প্রথমা। কেউ যে জেগে আছে তা তো বোধ হচ্ছে না। এতবড়ো রাজবাড়ি সমস্ত যেন হাঁ হাঁ করছে।

দ্বিতীয়া। চাকররাও সব-হঠাৎ কে কোথায় যেন চলে গেল!

তৃতীয়া। বাতিগুলো সব নিবে আসছে, কেউ জ্বালিয়ে দেবে না?

প্রথমা। আমার কেমন ভয় করছে ভাই।

দ্বিতীয়া। ( বাদকদিগকে দেখাইয়া দিয়া) ওরাও যে সব ঘুমোতে লাগল— কী মুশকিলেই পড়া গেল। ওদের তুলে দে না। কেমন গা ছম ছম করছে।

তৃতীয়া। মিছে না ভাই! একটা গান ধর্। ওগো তোমরা ওঠো ওঠো।

বাদকগণ। ( ধড়ফড় করিয়া উঠিয়া) অ্যাঁ অ্যাঁ! এসেছেন নাকি?

প্রথমা। তোমরা একবার বেরিয়ে গিয়ে দেখো না গো। কেউ কোথাও নেই। আমাদের আজকে বিদায় দেবে না নাকি?

একজন বাদক। ( বাহিরে গিয়া ফিরিয়া আসিয়া) ওদিকে যে সব বন্ধ।

প্রথমা। যাঁ। বন্ধ! আমাদের কি কয়েদ করলে নাকি?

দ্বিতীয়া। দূর। কয়েদ করতে যাবে কেন?

তৃতীয়া।

গান

নয়ন মেলে দেখি আমায় বাঁধন বেঁধেছে।

গোপনে কে এমন করে ফাঁদ ফেঁদেছে।