প্রায়শ্চিত্ত

বসন্ত-রজনীশেষে

বিদায় নিতে গেলেম হেসে,

যাবার বেলায় বঁধু আমায় কাঁদিয়ে কেঁদেছে।


প্রথমা। তোর সকল সময়েই গান। ভালো লাগছে না। কী হল বুঝতে পারছি নে।


অন্তঃপুরের প্রাঙ্গণ
বিভা,উদয়াদিত্য, রামচন্দ্র রায় ও সুরমা। বসন্ত রায়ের প্রবেশ
বসন্ত রায়কে দেখিয়া মুখে কাপড় ঢাকিয়া বিভা কাঁদিয়া উঠিল

বসন্ত রায়। ( উদয়াদিত্যের হাত ধরিয়া) দাদা, একটা উপায় করো।

উদয়াদিত্য। অন্তঃপুরের প্রহরীদের জন্যে আমি ভাবি নে। সদর-দরজায় এই প্রহরে যে দু-জন পাহারা দেয় তারাও আমার বশ আছে। কিন্তু দেখলুম বড়ো ফটক বন্ধ, সে তো পার হবার উপায় নেই।

বসন্ত রায়। উপায় নেই বললে চলবে কেন? উপায় যে করতেই হবে। দাদা, চলো।

উদয়াদিত্য। যদি বা ফটক পার হওয়া যায়, এ-রাজ্য থেকে পালাবে কী করে?

রামচন্দ্র। আমার চৌষট্টি দাঁড়ের ছিপ রয়েছে, একবার তাতে চড়ে বসতে পারলে আমি আর কাউকে ভয় করি নে।

বসন্ত রায়। সে নৌকা কোথায় আছে ভাই?

উদয়াদিত্য। সে নৌকা আমি রাজবাটীর দক্ষিণ পাশের খালের মধ্যে আনিয়ে রেখেছি। কিন্তু সে পর্যন্ত পৌঁছোব কী করে?

রামচন্দ্র। রামমোহন কোথায় গেল?

উদয়াদিত্য। সে বন্ধ ফটকের উপর খাঁচার সিংহের মতো বৃথা ধাক্কা মারছে, তাতে কোনো ফল হবে না।

বিভা। খাল তো দূরে নয়। তোমার দক্ষিণের ঘরের জানালার একেবারে নিচেই তো খাল।

উদয়াদিত্য। সে যে অনেক নিচে। লাফিয়ে পড়া চলে না তো।

সুরমা। ( উদয়াদিত্যকে মৃদুস্বরে) আমাদের এখানে যে দাঁড়িয়ে থাকলে কোনো ফল হবে তা তো বোধ হয় না। মহারাজ কি শুতে গিয়েছেন?

বসন্ত রায়। হাঁ শুতে গিয়েছেন, রাত তো কম হয় নি।

সুরমা। মা কি একবার তাঁর কাছে গিয়ে-

উদয়াদিত্য। মা এ-সমস্ত কিছুই জানেন না। জানলে তিনি কান্নাকাটি করে এমনি গোলমাল বাধিয়ে তুলবেন যে, আর কোনো উপায় থাকবে না। জানই তো তিনি মহারাজের কাছে কিছু বলতে গেলে সমস্তই উলটো হবে-মোঝের থেকে কেবল তিনিই অস্থির হয়ে উঠবেন।

সুরমা। বিভা, কাঁদিস নে বিভা। এ কখনো ঘটতেই পারে না। এ একটা স্বপ্ন— এ সমস্তই কেটে যাবে।