প্রায়শ্চিত্ত

বিভা। ভেবেছিলুম রাজবাড়িতে একবার যাব, কিন্তু যাব না।

রামমোহন। মা, যেয়ো না, যেয়ো না। গেলে তোমার অপমান হত— সেই অপমানে তোমার স্বামীর পাপ আরও বাড়ত।

বিভা। আমার মান অপমান সব চুকে গেছে। কিন্তু দাদার অপমান হত যে। দাদা এবার নৌকা ফেরাও।

উদয়াদিত্য। তুই কোথায় যাবি বিভা।

বিভা। তোমার সঙ্গে কাশী যাব।

উদয়াদিত্য। হায় রে অদৃষ্ট।

বিভা। দাদা, আমি আজ মুক্তি পেয়েছি। এখন তোমার চরণসেবা করে আমার জীবন আনন্দে কাটবে। মোহন, তুই তোর প্রভুর কাছে ফিরে যা।

রামমোহন। ওই দেখো মা, ফেরবার পথে আগুন লেগেছে, ওই যে মশালের আলো — ওই যে ময়ূরপংখি চলেছে। ও পথ আমার পথ নয়।

ধনঞ্জয়ের প্রবেশ

বিভা। বৈরাগীঠাকুর!

ধনঞ্জয়। কেন দিদি?

বিভা। আমাকে তোমাদের সঙ্গ দিয়ো ঠাকুর।

উদয়াদিত্য। ঠাকুর, শেষকালে বিভাকেও আমাদের পথ নিতে হল!

ধনঞ্জয়। সে তো বেশ কথা! দয়াময় হরি। কী আনন্দ! তোমার এ কী আনন্দ! ছাড় না, কিছুতেই ছাড় না। শ্বশুরবাড়ির রাস্তার ধারেও ডাকাতের মতো বসে আছ। দিদি এই মাঝরাস্তায় আমাদের পাগল প্রভুর তলব পড়েছে! একেবারে জোর তলব। চল্‌ চল্‌। চল্‌ চল্‌। পা ফেলে চল্‌। খুশি হয়ে চল্‌। হাসতে হাসতে চল্‌। রাস্তা এমন করে পরিস্কার করে দিয়েছে — আর ভয় কিসের!

গান

আমি   ফিরব না রে, ফিরব না আর ফিরব না রে —

এমন       হাওয়ার মুখে ভাসল তরী

কূলে       ভিড়ব না আর ভিড়ব না রে।

ছড়িয়ে গেছে সুতো ছিঁড়ে

তাই খুঁটে আজ মরব কি রে!

এখন       ভাঙা ঘরের কুড়িয়ে খুঁটি

বেড়া       ঘিরব না আর ঘিরব না রে।

ঘাটের রশি গেছে কেটে,

কাঁদব কি তাই বক্ষ ফেটে?

এখন       পালের রশি ধরব কষি,

এ রশি     ছিঁড়ব না আর ছিঁড়ব না রে!