বিসর্জন

রক্ত নহে ফুল আনিয়াছি মহাদেবী!

ভক্তি শুধু — হিংসা নহে, বিভীষিকা নহে।

এ জগতে দুর্বলেরা বড়ো অসহায়

মা জননী, বাহুবল বড়োই নিষ্ঠুর,

স্বার্থ বড়ো ক্রূর, লোভ বড়ো নিদারুণ,

অজ্ঞান একান্ত অন্ধ — গর্ব চলে যায়

অকাতরে ক্ষুদ্রেরে দলিয়া পদতলে।

হেথা স্নেহ-প্রেম অতি ক্ষীণ বৃন্তে থাকে,

পলকে খসিয়া পড়ে স্বার্থের পরশে।

তুমিও জননী, যদি খড়গ উঠাইলে,

মেলিলে রসনা, তবে সব অন্ধকার!

ভাই তাই ভাই নহে আর, পতি প্রতি

সতী বাম, বন্ধু শত্রু, শোণিতে পঙ্কিল

মানবের বাসগৃহ, হিংসা পুণ্য, দয়া

নির্বাসিত। আর নহে, আর নহে, ছাড়ো

ছদ্মবেশ। এখনো কি হয় নি সময়?

এখনো কি রহিবে প্রলয়রূপ তব?

এই-যে উঠিছে খড়্গ চারি দিক হতে

মোর শির লক্ষ্য করি, মাতঃ, এ কি তোরি

চারি ভুজ হতে? তাই হবে! তবে তাই

হোক। বুঝি মোর রক্তপাতে হিংসানল

নিবে যাবে। ধরণীর সহিবে না এত

হিংসা। রাজহত্যা! ভাই দিয়ে ভ্রাতৃহত্যা!

সমস্ত প্রজার বুকে লাগিবে বেদনা,

সমস্ত ভায়ের প্রাণ উঠিবে কাঁদিয়া।

মোর রক্তে হিংসার ঘুচিবে মাতৃবেশ,

প্রকাশিবে রাক্ষসী-আকার। এই যদি

দয়ার বিধান তোর, তবে তাই হোক!

জয়সিংহের প্রবেশ

 

জয়সিংহ।    বল্‌ চণ্ডী, সত্যই কি রাজরক্ত চাই?

এই বেলা বল্‌, বল্‌ নিজমুখে, বল্‌