চিরকুমার-সভা

রসিক। যাকে জন্ম দেওয়া যায় তার প্রতি মমতা হয় না? ঠাট্টা একবার মুখ থেকে বের হলেই কি রাজপুতের কন্যার মতো তাকে গলা টিপে মেরে ফেলতে হবে। হয়েছে কী, যতদিন চিরকুমার - সভা টিঁকে থাকবে এই ঠাট্টা তোদের দু বেলা শুনতে হবে।

নীরবালা। তবে ওটাকে তো একটু সকাল - সকাল সেরে ফেলতে হচ্ছে। মেজদিদি ভাই, আর দয়ামায়া নয় — রসিকদাদার রসিকতাকে পুরোনো হতে দেব না, চিরকুমার - সভার চিরত্ব আমরা অচিরে ঘুচিয়ে দেব। তবেই তো আমাদের বিশ্ববিজয়িনী নারী নাম সার্থক হবে। কিরকম করে আক্রমণ করতে হবে একটা কিছু প্ল্যান ঠাউরেছিস?

শৈলবালা। কিছুই না। ক্ষেত্রে উপস্থিত হয়ে যখন যেরকম মাথায় আসে।

নীরবালা। আমাকে যখন দরকার হবে রণভেরী ধ্বনিত করলেই আমি হাজির হব। ‘আমি কি ডরাই সখী কুমার - সভারে। নাহি কি বল এ ভুজমৃণালে?'

অক্ষয়ের প্রবেশ

 

অক্ষয়। অদ্যকার সভায় বিদুষীমণ্ডলীকে একটি ঐতিহাসিক প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করতে ইচ্ছা করি।

শৈলবালা। প্রস্তুত আছি।

অক্ষয়। বলো দেখি যে দুটি ডালে দাঁড়িয়েছিলেন সেই দুটি ডাল কাটতে চেয়েছিলেন কে।

নৃপবালা। আমি জানি মুখুজ্জেমশায়, কালিদাস।

অক্ষয়। না, আরো একজন বড়োলোক। শ্রীঅক্ষয়কুমার মুখোপাধ্যায়।

নীরবালা। ডাল দুটি কে।

অক্ষয়। ( বামে নীরকে টানিয়া ) এই একটি ( দক্ষিণে নৃপকে টানিয়া আনিয়া ) এই আর - একটি।

নীরবালা। আর, কুড়ুল বুঝি আজ আসছে?

অক্ষয়। আসছে কেন, এসেছে বললেও অত্যুক্তি হয় না। ঐ - যে সিঁড়িতে পায়ের শব্দ শোনা যাচ্ছে।

 

দৌড় দৌড়। শৈল পালাইবার সময় রসিকদাদাকে টানিয়া লইয়া গেল

চুড়িবালার ঝংকার এবং ত্রস্ত পদপল্লব কয়েকটির দ্রুত পতন শব্দ সম্পূর্ণ না মিলাইতেই

 

শ্রীশ ও বিপিনের প্রবেশ

 

অক্ষয়। পূর্ণবাবু এলেন না যে?

শ্রীশ। চন্দ্রবাবুর বাসায় তাঁর সঙ্গে দেখা হয়েছিল, কিন্তু হঠাৎ তাঁর শরীরটা খারাপ হয়েছে বলে আজ আর আসতে পারলেন না।

অক্ষয়। ( পথের দিকে চাহিয়া ) একটু বসুন, আমি চন্দ্রবাবুর অপেক্ষায় দ্বারের কাছে গিয়ে দাঁড়াই। তিনি অন্ধ মানুষ, কোথায় যেতে কোথায় গিয়ে পড়বেন তার ঠিক নেই। কাছাকাছি এমন স্থানও আছে, যেখানে কুমার - সভার অধিবেশন কোনোমতেই প্রার্থনীয় নয়।

[ অক্ষয়ের প্রস্থান