চিরকুমার-সভা
ভাব, আমরা যদি দুজনে দুই বন্ধুর হাতে পড়ি তা হলে বিয়ে হয়েও আমাদের ছাড়াছাড়ি হবে না — নইলে আমরা কে কোথায় চলে যাব তার ঠিক নেই। তাই তো সেই যুগল দেবতার জন্যে এত পূজার আয়োজন করছি ভাই। জোড়হস্তে মনে মনে বলছি, হে কুমার - সভার অশ্বিনীকুমারযুগল, আমাদের দুটি বোনকে এক বোঁটার দুই ফুলের মতো তোমরা একসঙ্গে গ্রহণ করো।

 

বিরহসম্ভাবনার উল্লেখমাত্রে দুই ভগিনী পরস্পরকে জড়াইয়া ধরিল

এবং নৃপ কোনোমতে চোখের জল সামলাইতে পারিল না

 

নৃপবালা। আচ্ছা নীরু, মেজদিদিকে কেমন করে ছেড়ে যাবি বল্‌ দেখি। আমরা দুজনে গেলে ওঁর আর কে থাকবে।

নীরবালা। সে কথা অনেক ভেবেছি। থাকতে যদি দেন তা হলে কি ছেড়ে যাই। ভাই, ওঁর তো স্বামী নেই, আমাদেরও নাহয় স্বামী না রইল। মেজদিদির চেয়ে বেশি সুখে আমাদের দরকার কী।

 

পুরুষবেশধারিণী শৈলবালার প্রবেশ

 

নীরবালা। ( টেবিলের উপরিস্থিত থালা হইতে একটি ফুলের মালা তুলিয়া লইয়া শৈলবালার গলায় পরাইয়া ) আমরা দুই স্বয়ম্বরা তোমাকে আমাদের পতিরূপে বরণ করলুম।

 

শৈলবালাকে প্রণাম করিল

 

শৈলবালা। ও আবার কী।

নীরবালা। ভয় নেই ভাই, আমরা দুই সতিনে তোমাকে নিয়ে ঝগড়া করব না। যদি করি সেজদিদি আমার সঙ্গে পারবে না — আমি একলাই মিটিয়ে নিতে পারব, তোমাকে কষ্ট পেতে হবে না। না, সত্যি বলছি মেজদিদি, তোমার কাছে আমরা যেমন আদরে আছি এমন আদর কি আর কোথাও পাব। কেন তবে আমাদের পরের গলায় দিতে চাস।

 

নৃপর দুই চক্ষু বাহিয়া ঝর্ ঝর্ করিয়া জল পড়িতে লাগিল

 

শৈলবালা। ( তাহার চোখ মুছিয়া দিয়া ) ও কী ও নৃপ, ছি। তোদের কিসে সুখ তা কি তোরা জানিস। আমাকে নিয়ে যদি তোদের জীবন সার্থক হত তা হলে কি আমি আর - কারও হাতে তোদের দিতে পারতুম।

রসিকের প্রবেশ

 

রসিক। ভাই, আমার মতো অসভ্যটাকে তোরা সভ্য করলি— আজ তো সভা এখানে বসবে, কিরকম করে চলব শিখিয়ে দে।

নীরবালা। ফের পুরোনো ঠাট্টা? তোমার ঐ সভ্য - অসভ্যর কথাটা এই পরশু থেকে বলছ।