যোগাযোগ
তৃতীয় দৃশ্যের আরম্ভে
নবীন ও মোতির মা

নবীন। মেজোবউ, আমি একটা পাপকর্মের ভূমিকা রচনা করেছি।

মোতির মা। সে শক্তি তোমার আছে। তার ফল হবে কী?

নবীন। পাপের ফল হবে পুণ্য। অন্তত সেই আশা।

মোতির মা। কী কুকীর্তি করেছ শুনি!

নবীন। ব্যাঙ্কটস্বামী নাম দিয়ে এক গ্রহাচার্য খাড়া করেছি। মাদ্রাজি। মস্ত ঝুঁটি, কপালে তিলক। মোটা লালপেড়ে ধুতি, চটিজোড়া আধখানা নৌকোর গড়নে।

মোতির মা। জ্যোতিষি নাকি?

নবীন। সাতপুরুষে না। ম্যাকিনন কোম্পানির আপিসে হিসেবের খাতা লেখে। চলনসই বাংলা জানে।

মোতির মা। কী করবে সে?

নবীন। তাকে দিয়ে যেটা বলাতে চাই বলিয়ে নেব।

মোতির মা। উলটো বলবে না তো?

নবীন। খুব কষে তাকে তালিম দিয়ে নিয়েছি।

মোতির মা। তোমার দাদা এ-সব মানে না যে।

নবীন। ব্যাবসা যখন ভালো চলে তখন মানবার দরকার করে না। সম্প্রতি ওঁর লোকসানের কপাল পড়েছে, এইবার লাভের কপাল খুলবে দৈবজ্ঞের।

মোতির মা। কথাটা তুললেই বড়োঠাকুর তোমাকে কষে বকুনি দেবেন।

নবীন। সেটা বকুনির ভান, বুদ্ধির গুমর দেখাবার জন্যে। সেই গুমর ভাঙে ভয়ের তাড়া খেলেই। বোকামি বেরিয়ে পড়ে নির্লজ্জ হয়ে ভিতর থেকে, যখন বিপদ ঘাড়ে দেয় চাপ।

মোতির মা। আমরা তো চলে যাচ্ছি, বুদ্ধির লঙ্কাকাণ্ড করবে কখন?

নবীন। এখনি। এই রাত্রেই।

মোতির মা। এখনি? কী বলো!

নবীন। সময় কই! লোকটাকে বাইরের ঘরে বসিয়ে রেখেছি। শেষ চেষ্টা করে যাব। সত্যি গ্রহ যদি আমাদের তাড়া করে তবে মিথ্যে গ্রহ লাগিয়ে তাকেই লাগাব তাড়া।

মোতির মা। দিবেরাত্রি অনেক ভুল করে থাক, তার উপরে নাহয় আরো একটা হবে, বোঝার উপর শাকের আঁটি। ওই আসছেন বড়োঠাকুর, যাই আমি।

[ প্রস্থান

মধুসূদনের প্রবেশ

 

নবীন। দাদা, একটু দরকার আছে।

মধুসূদন। কিসের দরকার? বিপ্রদাসবাবুর মোক্তারি করতে চাও?

নবীন। এত বড়ো শক্তি আমার নেই। দরকার আমার নিজের।