যোগাযোগ
পরের দৃশ্য

বিপ্রদাস ও কুমুদিনী

 

মধুসূদনের প্রবেশ

 

মধুসূদন। এলুম তোমাকে নিতে। তোমার আপন ঘরে যাবে না মহরানী? ভয় কিসের?

কুমুদিনী। ভয়? আমার ভয় গেছে ভেঙে। আপন ঘরে আসছি মনে করেই বেরিয়েছিলুম, এসে দেখলুম আমার আপন ঘর নেই ওখানে। তাই ভয় পেয়েছিলুম।

মধুসূদন। কিসের ভয়?

কুমুদিনী। তখন মনে বিশ্বাস ছিল, সমাজে মেয়েদের জন্যে খাঁচাকল তৈরি করেছে, সেখানে একবার ঢুকলে জীবনান্তকাল পর্যন্ত আর বেরোবার জো নেই।

মধুসূদন। আজ ভয় ভাঙল কিসে?

কুমুদিনী। আজ অমি জেনেছি, আমি শুধু মেয়েমানুষ নই, আমি মানুষ। জোর করে আমাকে বাঁধবে কী করে? আমার মনকে শ্রদ্ধা করে যদি না পাও তবে অপমান করে কিছুতেই পাবে না। কারাগারের দরজা বানিয়েছিল আমার আপন মনের অন্ধ বিশ্বাস, আজ ভেঙেছে আমার সেই বিশ্বাস। আজ আমি মুক্ত।

মধুসূদন। তা হলে তুমি কী করবে?

কুমুদিনী। যাব তোমার ঘরে। যদি আমাকে বরণ করে নিতে পার তো নিয়ো ; যদি না পার তো জেনো, আমার মন ছুটি পেয়েছে, আমাকে পারবে না ধরে রাখতে। আর কোথাও আশ্রয় যদি না থাকে, যম তো আমাকে ঠেলতে পারবে না।

মধুসূদন। তা হলে আসবে তুমি, এখনি আসবে?

কুমুদিনী। হাঁ, আসব।

বিপ্রদাস। কুমু, যাবি তুই?

কুমুদিনী। হাঁ, যাব দাদা। বন্দিনী হয়ে নয়, আপন সম্মান নিয়ে যাব — যাব সেইখানে যেখানে যাবার আসবার দরজা সমান খোলা রয়েছে। একদিন ভেবেছিলুম, আমার অদৃষ্টের বিধান, খাঁচার মধ্যেই পুজোর ঘর বানাতে হবে। আজ জেনেছি, পুজো খাঁচার বাইরে। আর কারো দাসীকে আমার দেবতা তাঁর আপন দাসীর সম্মান দেবেন না।

বিপ্রদাস। তা হলে তোর যাওয়া স্থির হল?

কুমুদিনী। হাঁ দাদা, মনের মধ্যে বেড়ি খসেছে, তাই যাচ্ছি, নইলে যেতেম না। দাদা, আশীর্বাদ করে বলো, আমাকে কেউ বন্দী করতে পারবে না, বন্দীশালার মধ্যেও নয়।

বিপ্রদাস। কেউ পারবে না, কেউ না, কারো অধিকার নেই।

 

মধুসূদনের হাত ধরে

 

কুমুদিনী। চলো, তবে যাই আমাদের ঘরে।

মধুসূদনের প্রতি

 

বিপ্রদাস। তোমাকে জিজ্ঞাসা করি, একে নিয়ে যেতে পারবে সাহস করে?

মধুসূদন। পারব। আমি মহরানীকেই খুঁজেছিলুম, পেয়েছি মহারানীকে। আজ আমি বুঝতে পেরেছি আমি জেলখানার দারোগা নই।

বিপ্রদাসকে প্রণাম করে

দাদা, এবার আমাকেও আশীর্বাদ দিয়ো।

যবনিকা