যোগাযোগ

কুমু নীরব

বিপ্রদাস। ছেলেমানুষি করিস নে।

কুমুদিনী। তুমি বুঝবে না দাদা, একটুও ছেলেমানুষি করছি নে।

বিপ্রদাস। তুই তো তাঁকে দেখিস নি।

কুমুদিনী। তা হোক। আমি যে ঠিক জেনেছি।

বিপ্রদাস। দেখ্‌ কুমু, চিরজীবনের কথা, ফস্‌ করে খেয়ালের মাথায় পণ করে বসিস নে।

কুমুদিনী। না দাদা, খেয়াল নয়। এই আমি তোমার পা ছুঁয়ে বলছি, আমি আর কাউকেই বিয়ে করব না।

বিপ্রদাস। আমি তোর কথা কিছুই বুঝতে পারছি নে।

কুমুদিনী। তুমি বুঝতে পারবে না দাদা। আমার যাঁর সঙ্গে বোঝাপড়া হয়ে গেছে তিনি আমার অন্তর্যামী।

দেওয়ানজি। বড়োবাবু, উনি যাঁর কথা শুনতে পান আমরা তাঁর কাছে কালা। এতে আমাদের হাত দেওয়া ভালো হবে না। আমি মনে বিশ্বাস রাখি ওঁর ঠাকুর ওঁকে ফাঁকি দেবেন না।

বিপ্রদাস। কিছুদিন সবুর করে দেখবি নে কুমু? যদি তোর ভুল হয়ে থাকে?

কুমুদিনী। না দাদা, হয় নি ভুল।

বিপ্রদাস। তা হলে আমি কথা পাঠিয়ে দিই?

কুমুদিনী। হাঁ, পাঠিয়ে দাও।

দ্বিতীয় অঙ্ক
প্রথম দৃশ্য

অখিল। নবুকাকা!

নবগোপাল। কী রে অখিল?

অখিল। তোমাদের বর বয়সেও যেমন শিবের সমতুল্য, তার ব্যবহারটাও দেখি সেই রকমের। এল বিয়ে করতে, সঙ্গে আনলে রাজ্যের ভূতপ্রেতের দল, ওর যত-সব ফিরিঙ্গি ইয়ারের ফৌজ। গ্রামটাকে শোধন করতে শেষকালে গোবর মিলবে না। গোরুগুলোকে বেবাক খেয়ে নিকেশ করে না দেয়।

নবগোপাল। দেখ্‌-না অখিল, অঘ্রানের সাতাশে পড়েছে বিয়ের দিন, এখনো দিন দশেক বাকি। এমন সময়ে লোকমুখে জানা গেল রাজা আসছে দলবল নিয়ে। বিয়ে নয় যেন লড়াই করতে আসছে— একখানা চিঠি লিখেও খবর দেয় নি। মনে ঠাউরেছে, ভদ্রতা করবে সাধারণ লোকে, গুমর করে অভদ্রতা করবে রাজা-রাজড়া।

অখিল। সে কী খুড়ো, রাজা বলো কাকে? ও কিসের রাজা? সরকার বাহাদুর ওকে রাজার মুখোশ পরিয়ে এক চোট হেসে নিয়েছেন। ও সরকারি যাত্রার দলের সঙ রাজা। সত্যিকার রাজা তো আমাদের বড়োবাবু, সেইজন্যেই মিথ্যে রাজার খেতাবে ওঁর দরকার হয় না।

নবগোপাল। আমার দাদা তো মহা ব্যস্ত হয়ে পড়লেন, স্থির করলেন স্টেশনে গিয়ে অভ্যর্থনা করে আনা চাই। আমি বললেম এ হতেই পারে না। ও যখন অগ্রাহ্য করে খবরই দিলে না তখন আমরা গায়ে পড়ে গিয়ে ওর খবর নেব এ চলবে না। ওঁর গাড়ির