যোগাযোগ

মধুসূদন। কী শুনি।

নবীন। শুনলে তুমি রাগ করবে।

মধুসূদন। না শুনলে আরো রাগ করব।

নবীন। কুম্ভকোনাম থেকে এক জ্যোতিষী এসেছে, তাকে দিয়ে আমার ভাগ্য পরীক্ষা করাতে চাই।

মধুসূদন। কোথাকার মূর্খ! এ-সব বিশ্বাস কর নাকি?

নবীন। সহজ অবস্থায় করি নে, ভয় লাগলেই করি।

মধুসূদন। ভয়টা কিসের শুনি।

 

নবীন মাথা চুলকোতে লাগল

 

মধুসূদন। ভয়টা কাকে বলোই-না।

নবীন। এ সংসারে তোমাকে ছাড়া ভয় কাউকেই করি নে। দেখছি তোমার ভাবগতিক ভালো নয়, তাই স্পষ্ট করে জানতে চাই গ্রহ কী করতে চান আমাকে নিয়ে, আর তিনি ছুটিই বা দেবেন কোন্‌ নাগাত।

মধুসূদন। তোমার মতো নাস্তিক, কিচ্ছু বিশ্বাস কর না, শেষকালে —

নবীন। দেবতার 'পরে বিশ্বাস থাকলে গ্রহকে বিশ্বাস করতুম না, দাদা। ডাক্তারকে যে মানে না, হাতুড়েকে মানতে তার বাধে না।

মধুসূদন। লেখাপড়া শিখে, বাঁদর, তোমার এই বিদ্যে!

নবীন। লোকটার কাছে যে ভৃগুসংহিতা রয়েছে। যেখানে যে-কেউ যে-কোনোখানেই জন্মাবে সকলেরই কুষ্টি একেবারে তৈরি — খাস সংস্কৃত ভাষায় লেখা। এর উপরে তো আর কথা চলে না। হাতে হাতে পরীক্ষা করে নাও।

মধুসূদন। বোকা ভুলিয়ে যারা খায় ভগবান তাদের পেট ভরাবার জন্যে তোমাদের মতো বোকা জুগিয়ে থাকেন।

নবীন। আবার সেই বোকাদের বাঁচাবার জন্যে সৃষ্টি করেছেন তোমাদের মতো বুদ্ধিমান। ভৃগুসংহিতার উপরে তোমার বুদ্ধি খাটিয়ে দেখোই-না। তোমার কাছে বড়ো বড়ো ঋষিমুনিদের ফাঁকিও ধরা পড়বে।

মধুসূদন। আচ্ছা, দেখব তোমার কুম্ভকোনামের চালাকি।

নবীন। তোমার যে-রকম জোর অবিশ্বাস দাদা, ওতে গণনায় ভুল হয়ে যায়। মানুষকে বিশ্বাস করলে মানুষ বিশ্বাসী হয়ে ওঠে, গ্রহদেরও সেই দশা। এই দেখো-না, সাহেবগুলো গ্রহ মানে না, তাই তারা তেরস্পর্শে যাত্রা করলেও লড়াই জেতে। সেদিন ছিল দিক্‌শূল, আরো কত কী, বেরিয়ে পড়ল তোমাদের ছোটোসাহেব, ঘোড়দৌড়ে জিতে এল বাজি — আমি হলে বাজি জেতা দুরস্তাং, ঘোড়াটা ছুটে এসে লাথি বসিয়ে দিত আমার পেটে। দাদা, এই-সব পাজি গ্রহনক্ষত্রের উপর তোমার বুদ্ধি খাটিয়ো না — একটু বিশ্বাস মনে রেখো।

মধুসূদন। আচ্ছা, কালকে তাকে দেখা যাবে।

নবীন। আমি তাকে আনিয়েছি। তোমাকে নির্জনে পাব বলে এই দশটা রাত্রেই তাকে নিয়ে এলুম।

মধুসূদন। কোথায় সে?

নবীন। চলো-না সেখানে গিয়ে একবার —

মধুসূদন। না না, বাইরে নয়, লোকজন এসে পড়বে।