যোগাযোগ

মোতির মা। কিন্তু আমরা যে গরিব দিদি!

কুমুদিনী। আমিও কম গরিব না। আমারও বেশ চলে যাবে। আজ আমার কী মনে হচ্ছে জান? এই-যে আমার হঠাৎ বিয়ে হল, এ তো সমস্ত আমি নিজে ঘটিয়ে তুললুম। কিন্তু কী অদ্ভুত মোহে, কী ছেলেমানুষি ক'রে! যা-কিছুতে সেদিন আমাকে ভুলিয়েছিল তার মধ্যে সমস্তই ছিল ফাঁকি। অথচ এমন দৃঢ় বিশ্বাস, এমন বিষম জেদ, যে, সেদিন আমাকে কিছুতেই কেউ ঠেকাতে পারত না। দাদা বাধা দেন নি বটে, কিন্তু কত ভয় পেয়েছেন, কত উদ্‌বিগ্ন হয়েছেন, তা কি আমি বুঝতে পারি নি! বুঝতে পেরেও নিজের ঝোঁকটাকে একটুও দমন করি নি।

মোতির মা। আচ্ছা দিদি, তুমি যে বিয়ে করতে মনস্থির করলে, কী ভেবে?

কুমুদিনী। তখন মনে একটুও সন্দেহ ছিল না যে প্রজাপতি যাকেই স্বামী বলে ঠিক করে দিয়েছেন তাকেই ভালোবাসবই। ছেলেবেলা থেকে কেবল মাকে দেখেছি, পুরাণ পড়েছি, কথকতা শুনেছি, মনে হয়েছে শাস্ত্রের শ্লোকের সঙ্গে নিজের জীবনকে গেঁথে দেওয়া খুব সহজ।

মোতির মা। দিদি, উনিশ বছরের কুমারীর জন্যে শাস্ত্র লেখা হয় নি।

কুমুদিনী। আজ বুঝতে পেরেছি সংসারে ভালোবাসাটা উপরি পাওনা। ওটাকে বাদ দিয়েই ধর্মকে আঁকড়ে ধরে সংসার-সমুদ্রে ভাসতে হয়। ধর্ম যদি সরস হয়ে ফুল না দেয়, ফল না দেয়, অন্তত শুকনো হয়ে যেন ভাসিয়ে রাখে।

 

মধুসূদনের প্রবেশ। মোতির মার প্রস্থান

 

মধুসূদন। বড়োবউ, তুমি যেতে পারবে না।

কুমুদিনী। কেন?

মধুসূদন। আমি বলছি বলে।

কুমুদিনী। তোমার হুকুম?

মধুসূদন। হাঁ, আমার হুকুম।

কুমুদিনী। বেশ, তা হলে যাব না। তার পরে, আর কী হুকুম আছে বলো।

মধুসূদন। না, আর কিছু নেই। শোনো, শোনো, তোমার জন্যে আংটি এনেছি।

কুমুদিনী। আমার যে আংটির দরকার ছিল সে তুমি পরতে বারণ করেছ, আর আমার আংটির দরকার নেই।

 

এক বাক্স আংটি খুলে

 

মধুসূদন। একবার দেখোই-না চেয়ে। এর যেটা তোমার পছন্দ সেইটাই তুমি পরতে পার।

কুমুদিনী। তুমি যেটা হুকুম করবে সেইটাই পরব।

মধুসূদন। আমি তো মনে করি তিনটেই তিন আঙুলে মানাবে।

কুমুদিনী। হুকুম করো তিনটেই পরি।

মধূসূদন। আমি পরিয়ে দিই?

কুমুদিনী। দাও পরিয়ে —