প্রকল্প সম্বন্ধেপ্রকল্প রূপায়ণেরবীন্দ্র-রচনাবলীজ্ঞাতব্য বিষয়পাঠকের চোখেআমাদের লিখুনডাউনলোডঅন্যান্য রচনা-সম্ভার |
নিমাই। (স্বগত) যাঁকে আমার স্কন্ধের উপরে উদ্যত করা হয়েছে—সর্বনাশ আর কী!
শ্রীপতি। এ দিকে যে বেরোবার সময় হয়ে এল তা দেখেছ? এতক্ষণ কী যে হল তার ঠিক নেই! নিদেন ইংরেজ ছোঁড়াগুলোর মতো খুব খানিকটা হো হো করতে পারলেও আসর গরম হয়ে উঠত। খানিকটা চেঁচিয়ে বেসুরো গান গাইলেও একটু জমাট হত—(উচ্চৈঃস্বরে) “আজ তোমায় ধরব চাঁদ আঁচল পেতে।”
চন্দ্রকান্ত। আরে থাম্ থাম্—তোর পায়ে পড়ি ভাই, থাম; দেখ্ আর্য ঋষিগণ যে রাগরাগিণীর সৃষ্টি করেছিলেন সে কেবল লোকের মনোরঞ্জনের জন্যে—কোনোরকম নিষ্ঠুর অভিপ্রায় তাঁদের ছিল না।
ভূপতি। এস তবে বরকনের উদ্দেশে থ্রী চিয়ার্স দিয়ে বেরিয়ে পড়া যাক—হিপ্ হিপ্ হুরে—
চন্দ্রকান্ত। দেখো, আমার প্রিয় বন্ধুর বিয়েতে আমি কখনোই এরকম অনাচার হতে দেব না; শুভকর্মে অমন বিদেশী শেয়াল-ডাক ডেকে বেরোলে নিশ্চয় অযাত্রা হবে। তার চেয়ে সবাই মিলে উলু দেবার চেষ্টা করো-না! ঘরে একটিমাত্র স্ত্রীলোক আছেন তিনি শাঁখ বাজাবেন এখন। আহা, এই সময়ে থাকত তাঁর গুটি দুই-তিন সহোদরা তা হলে কোকিলকণ্ঠের উলু শুনে আজ কান জুড়িয়ে যেত।
বিনোদবিহারী। তা হলে তোমার দুটি কান সামলাতে দিন বয়ে যেত।
ভূপতি। বিনোদ তবে ওঠো, সময় হল।
নলিনাক্ষ। এই তবে আমাদের অবিবাহিত বন্ধুত্বের শেষ মিলন! জীবনস্রোতে তুমি এক দিকে যাবে আমি এক দিকে যাব। প্রার্থনা করি, তুমি সুখে থাকো। কিন্তু মুহূর্তের জন্যে ভেবে দেখো বিনু, এই মরুময় জগতে তুমি কোথায় যাচ্ছ—
চন্দ্রকান্ত। বিনু, তুই বল্, মা, আমি তোমার জন্যে দাসী আনতে যাচ্ছি। তা হলে কনকাঞ্জলিটা হয়ে যায়।
শ্রীপতি। এইবার তবে উলু আরম্ভ হোক।
সকলে উলুর চেষ্টা। নেপথ্যে উলু ও শঙ্খ -ধ্বনি
নিমাই। ঐ-যে উলুর জোগাড় করে রেখেছ, এতক্ষণে একটুখানি বিয়ের সুর লাগল। নইলে কতকগুলো মিন্সেয় মিলে যেরকম বেসুরো লাগিয়েছিলে, বরযাত্রা কি গঙ্গাযাত্রা কিছু বোঝবার জো ছিল না।
ক্ষান্তমণি। শুনলি তো ভাই, আমার কর্তাটির মধুর কথাগুলি?
ইন্দুমতী। কেন ভাই, আমার তো মন্দ লাগে নি।
ক্ষান্তমণি। তোর মন্দ লাগবে কেন। তোর তো আর বাজে নি। যার বেজেছে সেই জানে।
ইন্দু্মতী। তুমি যে আবার একেবারে ঠাট্টা সইতে পার না। তোমার স্বামী কিন্তু ভাই, তোমাকে সত্যি ভালোবাসে। দিনকতক বাপের বাড়ি গিয়ে বরং পরীক্ষা করে দেখো-না—
ক্ষান্তমণি। তাই একবার ইচ্ছা করে, কিন্তু জানি থাকতে পারব না। তা যা হোক, এখন তোদের ওখানে যাই। ওরা তো বউবাজারের রাস্তা ঘুরে যাবে, সে এখনো ঢের দেরি আছে।
ইন্দুমতী। তুমি এগোও ভাই, আমি তোমার স্বামীর এই বইগুলি গুছিয়ে দিয়ে যাই। (ক্ষান্তমণির প্রস্থান) আজ ললিতবাবু এমন