প্রকল্প সম্বন্ধেপ্রকল্প রূপায়ণেরবীন্দ্র-রচনাবলীজ্ঞাতব্য বিষয়পাঠকের চোখেআমাদের লিখুনডাউনলোডঅন্যান্য রচনা-সম্ভার |
এই-যে সুষমা, শোন্ বলি। মরিয়া হয়ে মেয়েরা চিতার আগুনে মরেছে অনেক, ভেবেছে তাতেই পরমার্থ। তেমনি করেই নিজের হাতে নিজের ভাগ্যে আগুন লাগিয়ে দিনে দিনে মরতে চাস জ্বলে জ্বলে? চাস নে তুই ভালোবাসা, কিন্তু যে-মেয়ে চায়, পাষাণ সে করে নি আপন নারীর প্রাণ, কেন কেড়ে নিতে এলি তার চিরজীবনের আনন্দ। এই আমি আজ বলে দিলুম তোকে, ঘোড়ায় চড়িস, শিকার করিস, সন্ন্যাসীর কাছে মন্ত্র নিস, তবু তুই পুরুষ নোস। আইডিয়ার সঙ্গে গাঁটছড়া বেঁধে তোর দিন কাটবে না গো, তোর রাত বিছিয়ে দেবে কাঁটার শয়ন।
সোমশংকর। বাঁশি, শান্ত হও, চলো এখান থেকে।
বাঁশরি। যাব না তো কী! মনে কোরো না মরব বুক ফেটে। জীবন হবে চিরচিতানলের শ্মশান। কখনো এমন বিচলিত দশা হয় নি আমার। আজ কেন এল বন্যার মতো এই পাগলামি। লজ্জা! লজ্জা! লজ্জা! তোমাদের তিনজনের সামনে এই অপমান! থামো, সোমশংকর, আমাকে দয়া করতে এসো না। মুছে ফেলব এই অপমান, কোনো চিহ্ন থাকবে না এর কাল। এই আমি বলে গেলুম।
পুরন্দর। সোমশংকর, একটা কথা জিজ্ঞাসা করি।
সোমশংকর। বলুন।
পুরন্দর। যে-ব্রত তুমি স্বীকার করেছ তা সম্পূর্ণই তোমার আপন হয়েছে কি। তার ক্রিয়া চলেছে তোমার প্রাণক্রিয়ার সঙ্গে?
সোমশংকর। কেন সন্দেহ বোধ করছেন।
পুরন্দর। আমার প্রতি ভক্তিতেই যদি এই সংকল্প গ্রহণ করে থাক তবে এখনই ফেলে দাও এই বোঝা।
সোমশংকর। এমন কথা কেন বলছেন আজ। আমার মধ্যে দুর্বলতার লক্ষণ কিছু দেখছেন কি?
পুরন্দর। মোহিনী শক্তি আছে আমার, এমন কথা কেউ কেউ বলে–শুনে লজ্জা পাই; জাদুকর নই আমি।
সোমশংকর। আত্মার ক্রিয়াকে যারা বিশ্বাস করে না তারা তাকে বলে জাদুর ক্রিয়া।
পুরন্দর। ব্রতের মাহাত্ম্য তার স্বাধীনতায়। যদি ভুলিয়ে থাকি তোমাকে, সে-ভুল ভাঙতে হবে। গুরুবাক্য বিষ—সে-বাক্য যদি তোমার নিজের বাক্য না হয়।
সোমশংকর। সন্ন্যাসী, যে-ব্রত নিয়েছি সে আজ আমার রক্তে বইছে তেজরূপে, জ্বলছে বুকের মধ্যে হোমাগ্নির মতো। মৃত্যুর মুখোমুখি দাঁড়িয়েছি, আজ আমার দ্বিধা কোথায়।
পুরন্দর। এই কথাই শুনতে চেয়েছিলুম তোমার মুখ থেকে। আর-একটি কথা বাকি আছে। কেউ কেউ প্রশ্ন করে, কেন সুষমার বিবাহ দিলুম তোমার সঙ্গে। তোমারই কাছ থেকে আমি তার উত্তর চাই।
সোমশংকর। এতদিনের তপস্যায় এই নারীর চিত্তকে তুমি যজ্ঞের অগ্নিশিখার মতো ঊর্ধ্বে জ্বালিয়ে তুলেছ, আমারই ‘পরে ভার দিলে এই অনির্বাণ অগ্নিকে চিরদিন রক্ষা করতে।
পুরন্দর। বৎস, যতদিন রক্ষা করবে তার দ্বারা তুমি আপনাকেই রক্ষা করতে পারবে। ঐ তোমার মূর্তিমান ধর্ম, রইল তোমার সঙ্গে–ধর্মো রক্ষতি রক্ষিতম্। আমার বন্ধন থেকে তুমি মুক্ত, সেই সঙ্গে শিষ্যের বন্ধন থেকে আমিও মুক্তি পেলুম। তোমাদের