বাঁশরি
প্রথম অঙ্ক
প্রথম দৃশ্য

শ্রীমতী বাঁশরি সরকার বিলিতি য়ুনিভার্সিটিতে পাস করা মেয়ে। রূপসী না হলেও তার চলে। তার প্রকৃতিটা বৈদ্যুতশক্তিতে সমুজ্জ্বল, তার আকৃতিটাতে শান-দেওয়া ইস্পাতের চাকচিক্য।

ক্ষিতিশ সাহিত্যিক। চেহারায় খুঁত আছে, কিন্তু গল্প লেখায় খ্যাতনামা। পার্টি জমেছে সুষমা সেনদের বাগানে।

বাঁশরি। ক্ষিতিশ, সাহিত্যে তুমি নূতন ফ্যাশনের ধূমকেতু বললেই হয়। জ্বলন্ত লেজের ঝাপটায় পুরোনো কায়দাকে ঝেঁটিয়ে নিয়ে চলেছ আকাশ থেকে। যেখানে তোমাকে এনেছি এটা বিলিতি-বাঙালি মহল, ফ্যাশনেবল পাড়া। পথঘাট তোমার জানা নেই। দেউড়িতে কার্ড তলব করলেই ঘেমে উঠতে। তাই সকাল-সকাল আনলুম। আপাতত একটু আড়ালে বসো। সকলে এলে প্রকাশ কোরো আপন মহিমা। এখন চললুম, হয়তো না আসতেও পারি।

ক্ষিতিশ। রোসো, একটু সমঝিয়ে দাও। অজায়গায় আমাকে আনা কেন।

বাঁশরি। কথাটা খোলসা করে বলি তবে। বাজারে নাম করেছ বই লিখে। আরও উন্নতি আশা করেছিলুম। ভেবেছিলুম, নামটাকে বাজার থেকে উদ্ধার করে এত ঊর্ধ্বে তুলবে যে, ইতরসাধারণ গাল পাড়তে থাকবে।

ক্ষিতিশ। আমার নামটা বাজারে-চলতি ঘষা পয়সা নয়, সে কথা কি স্বীকার কর না।

বাঁশরি। সাহিত্যের সদর বাজারের কথা হচ্ছে না, তোমরা যে নতুনবাজারের চলতি দরে ব্যাবসা চালাচ্ছ সেও একটা বাজার। তার বাইরে যেতে তোমার সাহস নেই পাছে মালের গুমোর কমে। এবারে তারই প্রমাণ পেলুম তোমার এই হালের বইটাতে যার নাম দিয়েছ ‘বেমানান’। সস্তায় পাঠক ভোলাবার লোভ তোমার পুরো পরিমাণেই আছে। মাঝারি লেখকেরা মরে ঐ লোভে। তোমার এই বইটাতে বলি আধুনিকতার বটতলায় ছাপা, খেলো আধুনিকতা।

ক্ষিতিশ। কিঞ্চিৎ রাগ হয়েছে দেখছি; ছুরিটা বিঁধেছে তোমাদের ফ্যাশনেবল শার্ট-ফ্রণ্ট ফুঁড়ে।

বাঁশরি। রামো! ছুরি বল ওকে! যাত্রার দলের কাঠের ছুরি, রাংতা-মাখানো। ওতে যারা ভোলে তারা অজ্‌বুগ।

ক্ষিতিশ। আচ্ছা, মেনে নিলেম। কিন্তু আমাকে এখানে কেন।

বাঁশরি। তুমি টেবিল বাজিয়ে বাজনা অভ্যেস কর, যেখানে সত্যিকার বাজনা মেলে সেইখানে শিক্ষা দিতে নিয়ে এলুম। এদের কাছ থেকে দূরে থাক, ঈর্ষা কর, বানিয়ে দাও গাল। তোমার বইয়ে নলিনাক্ষের নামে যে দলকে সৃষ্টি করে লোক হাসিয়েছে সে দলের মানুষকে কি সত্যি করে জান।

ক্ষিতিশ। আদালতের সাক্ষীর মতো জানি নে, বানিয়ে বলবার মতো জানি।

বাঁশরি। বানিয়ে বলতে গেলে আদালতের সাক্ষীর চেয়ে অনেক বেশি জানা দরকার হয়, মশায়। তখন কলেজে পড়া মুখস্থ করতে যখন শিখেছিলে রসাত্মক বাক্যই কাব্য; এখন সাবালক হয়েছ তবু ঐ কথাটা পুরিয়ে নিতে পারলে না যে, সত্যাত্মক বাক্য রসাত্মক হলেই তাকে বলে সাহিত্য।

ক্ষিতিশ। ছেলেমানুষি রুচিকে রস জোগাবার ব্যাবসা আমার নয়। আমি এসেছি জীর্ণকে চূর্ণ করে সাফ করতে।

বাঁশরি। বাস্‌ রে! আচ্ছা বেশ, কলমটাকে যদি ঝাঁটাই বানাতে চাও তা হলে আঁস্তাকুড়টা সত্যি হওয়া চাই, ঝাঁটাগাছটাও, আর