প্রকল্প সম্বন্ধেপ্রকল্প রূপায়ণেরবীন্দ্র-রচনাবলীজ্ঞাতব্য বিষয়পাঠকের চোখেআমাদের লিখুনডাউনলোডঅন্যান্য রচনা-সম্ভার |
সুষমা। কখনো ভুলব না।
পুরন্দর। প্রাণকে নারী পূর্ণতা দেয়, এইজন্যেই নারী মৃত্যুকেও মহীয়ান করতে পারে, তোমার কাছে এই আমার শেষ কথা।
ক্ষিতিশ। তোমার হিন্দুস্থানী শোফারটা ভোরবেলা মুহুর্মুহু বাজাতে লাগল গাড়ির ভেঁপু। চেনা আওয়াজ, ধড়্ফড়িয়ে বিছানা থেকে উঠে পড়লুম।
বাঁশরি। ভোরবেলায়? অর্থাৎ?
ক্ষিতিশ। অর্থাৎ আটটার কম হবে না।
বাঁশরি। অকালবোধন!
ক্ষিতিশ। দুঃখ নেই, তবু জানতে চাই কারণটা। কোনো কারণ না থাকলেও নালিশ করব না।
বাঁশরি। বুঝিয়ে বলছি। লেখবার বেলায় নলিনাক্ষের দল বলে যাদের দাগা দিয়েছ তাদের সামনে এলেই দেখি তোমার মন যায় এতটুকু হয়ে। মনে মনে চেঁচিয়ে নিজেকে বোঝাতে থাক–ওরা তো ডেকোরেটেড ফুল্স্। কিন্তু, সেই স্বগতোক্তিতে সংকোচ চাপা পড়ে না। সাহিত্যিক আভিজাত্যবোধকে অন্তরের মধ্যে ফাঁপিয়ে তোল তবু নিজেকে ওদের সমান বহরে দাঁড় করাতে পার না। সেই চিত্তবিক্ষেপ থেকে বাঁচাবার জন্য নলিনাক্ষ-দলের দিন আরম্ভ হবার পূর্বেই তোমাকে ডাকিয়েছি। সকালবেলায় অন্তত নটা পর্যন্ত আমাদের এখানে রাতের উত্তরাকাণ্ড। আপাতত এ বাড়িটা সাহারা মরুভূমির মতো নির্জন।
ক্ষিতিশ। ওয়েসিস দেখতে পাচ্ছি এই ঘরটার সীমানায়।
বাঁশরি। ওগো পথিক, ওয়েসিস নয়, ভালো করে যখন চিনবে তখন বুঝবে, মরীচিকা।
ক্ষিতিশ। আমার মাথায় আরও উপমা আসছে বাঁশি, আজ তোমার সকালবেলাকার অসজ্জিত রূপ দেখাচ্ছে যেন সকালবেলাকার অলস চাঁদের মতো।
বাঁশরি। দোহাই তোমার, গদ্গদ ভাবটা রেখে দিয়ো একলা-ঘরের বিজনবিরহের জন্য। মুগ্ধ দৃষ্টি তোমাকে মানায় না। কাজের জন্য ডেকেছি, বাজে কথা স্ট্রিক্ট্লি প্রোহিবিটেড।
ক্ষিতিশ। এর থেকে ভাষার রেলেটিভিটি প্রমাণ হয়। আমার পক্ষে যা মর্মান্তিক জরুরি তোমার পক্ষে তা ঝেঁটিয়ে-ফেলা বাজে।
বাঁশরি। আজ সকালে এই আমার শেষ অনুরোধ, গাঁজিয়ে-ওঠা রসের ফেনা দিয়ে তাড়িখানা বানিয়ো না নিজের ব্যবহারটাকে। আর্টিস্টের দায়িত্ব তোমার।
ক্ষিতিশ। আচ্ছা, তবে মেনে নিলুম দায়িত্ব।
বাঁশরি। সাহিত্যিক, হতাশ হয়ে পড়েছি তোমার অসাড়তা দেখে। নিজের চক্ষে দেখলে একটা আসন্ন ট্র্যাজেডির সংকেত–