বাঁশরি
শৈলের প্রবেশ

শৈল। সব প্রস্তুত, আসুন আপনারা।


দ্বিতীয় দৃশ্য
বারান্দায় সোমশংকর। গহনার বাক্স খুলে জহুরি গহনা দেখাচ্ছে। কাপড়ের গাঁঠরি নিয়ে অপেক্ষা করছে কাশ্মীরী দোকানদার।

বাঁশরি। কিছু বলবার আছে।

সোমশংকর জহুরি ও কাশ্মীরীকে ইঙ্গিতে বিদায় করলে।

সোমশংকর। ভেবেছিলুম আজই যাব তোমার কাছে।

বাঁশরি। ও-সব কথা থাক্‌। ভয় নেই, কান্নাকাটি করতে আসি নি। তবু আর কিছু না হোক তোমার ভাবনা ভাববার অধিকার একদিন দিয়েছ আমাকে। তাই একটা কথা জিজ্ঞাসা করি–জান সুষমা তোমাকে ভালোবাসে না?

সোমশংকর। জানি।

বাঁশরি। তাতে তোমার কিছুই যায় আসে না?

সোমশংকর। কিছুই না।

বাঁশরি। তা হলে সংসারযাত্রাটা কিরকম হবে।

সোমশংকর। সংসারযাত্রার কথা ভাবছিই নে।

বাঁশরি। তবে কিসের কথা ভাবছ।

সোমশংকর। একমাত্র সুষমার কথা।

বাঁশরি। অর্থাৎ ভাবছ, তোমাকে ভালো না বেসেও কী করে সুখী হবে ঐ মেয়ে।

সোমশংকর। না, তা নয়। সুখী হবার কথা সুষমা ভাবে না–ভালোবাসারও দরকার নেই তার।

বাঁশরি। কিসের দরকার আছে তার, টাকার?

সোমশংকর। তোমার যোগ্য কথা হল না, বাঁশি।

বাঁশরি। আচ্ছা, ভুল করেছি। কিন্তু, প্রশ্নটার উত্তর বাকি। কিসের দরকার আছে সুষমার।

সোমশংকর। ওর একটি ব্রত আছে। ওর জীবনে সমস্ত দরকার তাই নিয়ে, তাকে সাধ্যমতো সার্থক করা আমারও ব্রত।

বাঁশরি। ওর ব্রত আগে, তারই পশ্চাতে তোমার–পুরুষের মতো শোনাচ্ছে না, এ কথা ক্ষত্রিয়ের মতো নয়ই। এতবড়ো পুরুষকে মন্ত্র পড়িয়েছে ঐ সন্ন্যাসী। বুদ্ধিকে দিয়েছে ঘোলা করে, দৃষ্টিকে দিয়েছে চাপা। শুনলুম সব, ভালো হল। গেল আমার শ্রদ্ধা ভেঙে, গেল আমার বন্ধন ছিঁড়ে। বয়স্ক শিশুকে মানুষ করবার কাজ আমার নয়, সে-কাজের ভার সম্পূর্ণ দিলেম ছেড়ে ঐ মেয়ের হাতে।

পুরন্দরের প্রবেশ
সোমশংকর প্রণাম করলে, অগ্নিশিখার মতো বাঁশরি উঠে দাঁড়াল তার সামনে।