নলিনী
ফুলির প্রবেশ

ফুলি। মা বলেচেন,সারাদিন তুমি ঘরে ব’সে আছ, আজ একটিবার আমাদের বাড়িতে চল।

নলিনী। না বোন,আজকের আমি পারব না!

ফুলি। তবে তুমি বাগানে চল। একলা মালা গাঁথতে আমার ভালো লাগচে না। একবারটি চল না বাগানে!

নলিনী। তোর পায়ে পড়ি ফুলি, আমাকে আর বাগানে যেতে বলিস নে,আমাকে একটু একলা থাকতে দে!

ফুলি। আমাদের সেই মাধবীলতাটি শুকিয়ে এসেচে, তাতে একটু জল দিবি নে?

নলিনী। না।

ফুলি। আমাদের সেই পোষ-মানা পাখীর ছানাটি আজকের একটু একটু উড়ে বেড়াচ্চে,তাকে একবার দেখতে ইচ্ছে করচে না?

নলিনী। না ফুলি!

ফুলি। তবে আমি যাই, মালা গাঁথি গে,কিন্তু তোকে মালা দেব না!

[প্রস্থান


তৃতীয় দৃশ্য
বিদেশ
নীরদ নীরজা
উদ্যান

নীরদ। (স্বগত) এত দিন এলুম,মনে ক’রেছিলুম একখানা চিঠিও পাওয়া যাবে। ‘কেমন আছ’ একবার জিগেস করতেও কি নেই? সত্রীলোকের কঠোর হৃদয় কি ভয়ানক দৃশ্য!

নীরজা। (কাছে আসিয়া) এমন ক’রে চুপ ক’রে আছ কেন নীরদ?

নীরদ। আহা, কি সুধাময় স্বর! কে বলে স্ত্রীলোকের প্রাণ কঠিন? মমতাময়ি, এত সুধা তোমাদের প্রাণে কোথায় থাকে? আমি কি চুপ ক’রে আছি! আর থাকব না। বলো কি করতে হবে। এসো, আমারা দুজনে মিলে গান গাই।

নীরজা। না নীরদ, আমার জন্যে তোমাকে কিছু করতে হবে না। তোমাকে বিমর্ষ দেখলে আমার কষ্ট হয় বলে যে তুমি প্রফুল্লতার ভাণ করবে সে আমার পক্ষে দ্বিগুণ কষ্টকর! একবার তোমার দুঃখে আমাকে দুঃখ করতে দাও,মিছে হাসির চেয়ে সে ভালো।

নীরদ। ঠিক বলেছ নীরজা! দিনরাত্রি কি প্রমোদের চপলতা ভালো লাগে? এমন সময় কি আসে না যখন স্তব্ধ হয়ে ব’সে দুটিতে মিলে সন্ধেবেলায় নিরিবিলি দুজনের দুঃখে দুঃখে কোলাকুলি হয়? দুজনের বিষণ্ন মুখে দুজনে চেয়ে থাকে? দুজনের চোখের জলের মিলন হয়ে হৃদয়ের পবিত্র গঙ্গা যমুনার সঙ্গম হয়? এই লও নীরজা,আমার এই বিষণ্ন প্রাণ তোমার হাতে দিলেম, একে তোমার ওই অতি কোমল মমতার মধ্যে ঢেকে রাখ,দাও এর চোখের জল মুছিয়ে দাও। তুমি মমতা ক’রেই ভালো থাক, তুমি স্নেহ দিতেই ভালোবাস – দাও, আরও স্নেহ দাও, আরও মমতা কর। আমি চুপ ক’রে তোমার ঐ মধুর করুণা উপভোগ করি।