নলিনী
সে যদি চাহে মরি যে তাহে –
          কেন মুদে আসে আঁখির পাতা!
ম্লান মুখে সখি সে যে চলে যায়,
ও তারে ফিরায়ে ডেকে নিয়ে আয়,
বুঝিল না সে যে কেঁদে গেল –
          ধূলায় লুটাইল হৃদয়লতা!
[গাইতে গাইতে প্রস্থান


দ্বিতীয় দৃশ্য
গৃহ

নবীন। নীরদ বিদেশে যাবার পর থেকে নলিনীর এ কি হ’ল? সে উল্লাস নেই,সে হাসি নেই। বাগানে তার আর দেখা পাই নে। দিনরাত ঘরের মধ্যেই একলা ব’সে থাকে। নলিনী নীরদকেই বাস্তবিক ভালোবাসত! এইটে আর আগে বুঝতে পারিনি! এমনি অন্ধ হয়েছিলেম। নীরদের সমুখে সে যেন নিজের প্রেমের ভারে নিজে ঢাকা পড়ে যেত! তাকে ঠিক দেখা যেত না। নীরদের সমুখে সে এমনি অভিভূত হয়ে পড়ত যে আমাদের কাছে পেলে সে যেন আশ্রয় পেত, সে যেন আমাদের পাশে আপনাকে আড়াল ক’রে তাড়াতাড়ি আত্মসম্বরণ করতে চেষ্টা করত। নীরদের পূর্ণদৃষ্টি সূর্যালোকে পাছে তার প্রাণের সমস্তটা একেবারে দেখা যায় এই ভয়ে সে নীরদের সমুখে অস্থির হয়ে পড়ত; কি ভুলই ক’রেছি! যাই, তাকে একবার খুঁজে আসি গে! আজ তার সে করুণ মুখখানি দেখলে বড়ো মায়া করে। তার মুখের সেই সরল হাসিখানি যেন নিরাশ্রয় হয়ে আমার চোখের সমুখে কেঁদে কেঁদে বেড়াচ্চে! আবার কবে সে হাসবে?

[ প্রস্থান


নলিনীর গৃহে প্রবেশ ও জানালার কাছে উপবেশন

নলিনী। (স্বগত) আমাকে একবার বলেও গেলে না? আমি তাঁর কি ক’রেছিলেম? আমাকে যদি তিনি ভালোবাসতেন তবে কি একবার বলে যেতেন না?

ফুলির প্রবেশ

ফুলি। বাগানে বেড়াতে যাবে না?

নলিনী। আজকের থাক্‌ ফুলি, আর এক দিন যাব।

ফুলি। তোর কি হয়েচে দিদি, তুই অমন ক’রে থাকিস কেন!

নলিনী। কিছু হয় নি বোন,আমার এই রকমই স্বভাব।

ফুলি। আগে তো তুই অমন ছিলি নে!

নলিনী। কি জানি আমার কি বদল হয়েছে!