নলিনী

ফুলি। আচ্ছা দিদি,কাকাকে আর দেখতে পাই নে কেন? কাকা কোথায় চলে গেছেন?

নলিনী। (ফুলিকে কোলে লইয়া,কাঁদিয়া উঠিয়া) তুই বল্‌ না তিনি কোথায় চলে গেছেন! যাবার সময় তিনি তো কেবল তোকেই বলে গেছেন! আমাদের কাউকে কিছু বলে যান নি!

ফুলি। (অবাক্‌ হইয়া) কই, আমাকে ত কিছু বলেন নি!

নলিনী। তোকে তিনি বড়ো ভালোবাসতেন। না ফুলি? আমাদের সকলের চেয়ে তোকে তিনি বেশী ভালোবাসতেন!

ফুলি। তুমি কাঁদচ কেন দিদি? কাকা হয়ত শীগগির ফিরে আসবেন॥

নলিনী। শীগগির কি আসবেন? তুই কি ক’রে জানলি?

ফুলি। কেনই বা আসবেন না?

নলিনী। ফুলি, তুই আমার জন্য এক ছড়া মালা গেঁথে নিয়ে আয়গে! আমি একটু একলা ব’সে থাকি।

ফুলি। আচ্ছা।

[ প্রস্থান


নবীনের প্রবেশ

নবীন। নলিনী, তুমি কি সমস্ত দিন এই রকম জানালার কাছে ব’সে ব’সেই কাটাবে?

নলিনী। আমার আর কাজ কি আছে? এইখানটিতে ব’সে থাকতে আমার ভালো লাগে।

নবীন। আগেকার মত আজ একবার বাগানে বেড়াই গে চল না।

নলিনী। না, বাগানে আর বেড়াব না!

নবীন। নলিনী, কি করলে তোমার মন ভালো থাকে আমাকে বলো। আমার যথাসাধ্য আমি করব।

নলিনী। এইখেনে আমি একটুখানি একলা ব’সে থাকতে চাই। তা হ’লেই আমি ভালো থাকব।

নবীন। আচ্ছা।

[ প্রস্থান
এক প্রতিবেশিনীর প্রবেশ

প্র। তার কি হ’ল বল্‌ দেখি বোন্‌ঝি, আর যে বড়ো আমাদের ও দিকে যাস নে।
নলিনী। কি বলব মাসী, শরীরটা বড়ো ভালো নেই।

প্র। আহা,তাই তো লো,তোর মুখখানি বড়ো শুকিয়ে গেছে! চোখের গোড়ায় কালী পড়ে গেছে! মুখে হাসিটি নেই! তা, এমন ক’রে ব’সে আছিস কেন লো! আমার সঙ্গে আয়, দুজনে একবার পাড়ায় বেড়িয়ে আসি গে।

নলিনী। আজকের থাক্‌ মাসী!

প্র। কেনে লা! আমার দিদির বাড়ি নতুন বৌ এসেচে, তাকে একবার দেখবি চ।

নলিনী। আর এক দিন দেখব এখন মাসী, আজকের থাক্‌। আজ আমি বড়ো ভালো নেই।

প্র। আহা,থাক্‌ তবে। যে শরীর হয়ে গেছে,বাতাসের ভর সয় কি না সয়! আজ তবে আসি মা, ঘরকন্নার কাজ পড়ে রয়েচে।

[প্রস্থান